দ্রুত ঘুম আসার ১০টি বৈজ্ঞানিক উপায়


ইশ্, আজও রাত তিনটা বেজে গেল এখনো ঘুম আসছে না। কাল আবার সকালে উঠতেও হবে। রোজ রোজ একই সমস্যা আর ভালো লাগছে না। রাতে একটা ভালো ঘুম দিয়ে সকালে পরিপূর্ন এনার্জি নিয়ে ঘুম থেকে উঠার অনুভুতিটাই একদম অন্যরকম। কিন্তু দু:খের ব্যপার হলো এই মডার্ন সোসাইটিতে এরকম ভাগ্যবান লোকের দেখা পাওয়া দুষ্কর।

তার ফলস্বরূপ ঘুমের ঘাটতির কারণে আমাদের মাশুল গুনতে হচ্ছে। ব্যপারটা এরকম নয় ঘুমের ঘাটতির কারণে যে সমস্যা আমাদের জীবনে হচ্ছে তা খুব অল্পস্বল্প। এটিকে ইগনোর করারও উপায় নেই। ডিপ্রেশন, ক্যান্সার, ডায়াবেটিস, মেমোরিলস কয়েকটা বললাম মাত্র।

একটা মানুষের জীবনে যত রোগ দেখা যায় তার বেশিরভাগ রোগই হয় তার ঘুমের ঘাটতির কারণে।  মজার তথ্য হচ্ছে আপনাকে কেমন দেখতে অর্থাৎ আপনার লুকিংও ঘুমের সাথে জড়িত।

কানাডিয়ান ডক্টর এসোসিয়েশন এর এক রিসার্চ থেকে জানা যায় ঘুমের ঘাটতি আপনার ওজন কমানোর অক্ষমতার সাথে সরাসরি জড়িত। দুটি গ্রুপ করে তাদের মধ্যে একই ডায়েট একই এক্সারসাইজ রুটিন দেয়া হলো। এদের মধ্য দেখা গেলো যে গ্রুপটি রাতে ০৬ ঘন্টার কম ঘুমাতো তারা অন্য গ্রুপের ছেয়ে অনেক কম হারে শরীরে ফ্যাট আর ওয়েট কমাতে সক্ষম হলেন।

তো আশা করছি এতোক্ষন ধরে আপনাকে এটা বোঝাতে সক্ষম হয়েছি যে ঘুমের ঘাটতি কেন একটা বড় সমস্যা। যা একদমই ইগনোর করা চলেনা। এবার আপনি নিশ্চই এটাকে বড় সমস্যা মনে করে এর সমাধান খুঁজতে শুরু করছেন। আসলেই এর সহজ সমাধান কি? আজকে আপনাদের সাথে  শেয়ার করবো দ্রুত ঘুম আসার ১০টি বৈজ্ঞানিক উপায় যেন আদপনি খুব দ্রুত এবং স্মার্টলি ঘুমিয়ে পড়তে পারেন। তাহলে চলুন শুরু করা যাক

১। ঘুম কি? ঘুমের উপকারিতা কি
অনেকেই বলেন ঘুমানো টাইম নষ্ট। দিনে আট ঘন্টা ‍ঘুমিয়ে কাটালেতো জীবনের তিনভাগের একভাগ এখানেই শেষ। ঘুম আসলে কি? কেন এটাকে এতো গুরুত্বা দিবো। জীবনের মতো ঘুমেরট ডেফিনেশন কেউ এখনো দিতে পারেনি। তাও যদি আমরা মোটামুটি বলার চেষ্টা করি তাহলে ঘুম হলো একটি প্রাকৃতিক পর্যায়ক্রমিক বিশ্রাম অবস্থান যখন চোখ বন্ধ থাকে আর চেতনা পুরোপুরি বা আংশিকভাবে হারিয়ে যায়। যাতে বাইরের কোন উদ্দীপনার উপর শরীরের সাড়া দেয়ার প্রক্রিয়া কম হতে পারে।

সংজ্ঞা জানার চাইতেও বেশি এটা জানা প্রয়োজন ঘুমের কারণে আমাদের কি  কি উপকার হয়। যখন আপনি জেগে থাকেন ঐ অবস্থাকে ক্যাটাবলিক স্টেট বলা হয়। ক্যাটাবলিক স্টেটে আমাদের এনার্জি খরচ হতে থাকে। আর আমাদের ঘুমের সময়কে বলা হয় অ্যানাবলিক স্টেট। অ্যানাবলিক স্টেটে আমরা এনার্জি সংগ্রহ করতে থাকি।

ভালো ঘুম আমাদের হরমোন ব্যালেন্সিং এ সহায়তা করে, মেটাবলিজমকে বুস্ট করে, ফিজিক্যাল এনার্জি বাড়ায় এবং ব্রেনের ফাংশনগুলোকে ইম্প্রুভ করতে সাহায্য করে। সঠিকভাবে ঘুমাতে শুরু করলে যে জীবনটা পাবেন কোনভাবেই আপনি আর তা হাতছাড়া করতে চাইবেন না।

২। প্রয়োজনীয় আলো পাওয়া
একটা কোয়ালিটি স্লিপের জন্য সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব হলো মেলাটনিন নামক একটা হরমোনের বডিতে সাধারণভাবে ক্ষরণ হওয়া। ব্রেনের পিনিঅ্যাল গ্ল্যান্ড থেকে এ হরমোন নিসৃত হয়। যেটা আমাদের শরীরে স্লিপ ওয়েক সাইকলটাকে মেন্টাইন করার জন্য মস্তিষ্কে সংকেত পাঠায়। মেলাটনিনের ক্ষরণ লাইট এক্সপোজারের সাথে সরাসরি রিলাটেড। দিনে যত বেশি সম্ভব আলোর মধ্যে থাকার চেষ্টা করুন আর রাতে যত কম সম্ভব আলোর সম্মুখীন হওয়ার চেষ্টা করুন। আর দেখুন কিরকম ম্যাজিকের মত আপনার ঘুমের কোয়ালিটি ইম্প্রুভ হয়।

৩। এভয়েড করুন ডিজিটাল ডিভাইস
আপনার ঘুমের কোয়ালিটি ইম্প্রুভ করার জন্য এখনই যদি আপনি কিছু করতে পারেন তা হলো আর্টিফিশিয়াল ব্লু স্ক্রীন যেমন মোবাইল টিভি ল্যাপটপ এগুলোকে এভয়েড করা। রাতে ঘুমোতে যাবার নূন্যতম এক ঘন্টা পূর্বে এসব ডিভাইস ব্যবহার থেকে বিরত রাখুন। যদিও আমাদের অনেকের অভ্যাসই হলো রাতে ঘুমাতে ঘুমাতে একটু নোটিফিকেশন চেক করা। অনেকে আবার সরারাত ধরে গেমস খেলছেন। এগুলো করা মানে একটু একটু করে নিজেকে মেরে ফেলার সমান।

৪। ডিভাইসে ব্লু লাইট ফিল্টার ব্যবহার করুন
অনেক সময় আপনার জরুরী প্রয়োজনে ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহার করা লাগতে পারে। যদি এরকম পরিস্থিতিতে পড়ে যান তাহলে ব্লু লাইট ফিল্টার এপস ব্যবহার করুন। যেটা আপনার দেয়া টাইম থেকে ব্লুলাইট ফিল্টারগুলোকে অটোমেটিক রিমুভ করে দেয়। এটা ব্যবহার করলে কাজে লাগতে পারে। তবে কোয়ালিটি স্লিপ পেতে হলে অবশ্যই শোয়ার একঘন্টা আগে সকল ডিজিটাল স্ক্রীন এড়িয়ে চলুন।

৫। ক্যাফেইন এড়িয়ে চলুন
অনেকেই হয়তো জানেন কিন্তু মানেন না। ক্যাফেইন আমাদের ঘুমের জন্য অনেক বড় বাঁধা হয়ে দাাঁড়ায়। হাই কোয়ালিটি স্লিপ এ্যাচিভ করার জন্য বিকাল চারটার পর সব রকম চা, কপি এড়িয়ে চলুন। যদি তার আগে আপনি কিছুটা পান করেনও তাহলে আপনার বডি সময় পাবে এগুলোকে বের করে দেয়ার।

৬। সঠিক তাপমাত্রা
হুম আপনি ঠিক ধরেছেন। একটা গভীর ঘুমের জন্য আপনার রুমের টেম্পারাচার ২০ ডিগ্রি সেলসিয়াস হচ্চে সর্বোত্তম। ১২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে এবং ২৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসের উপরে তাপমাত্রা হলে তা আপনার ঘুমে প্রভাব ফেলবে। তাই ঘরের তাপমাত্রার বিষয়েও সচেতন থাকুন।

৭। সঠিক সময় ঘুমাতে যাওয়া
রিসার্চে জানা গেছে মানুষের শরীরে ভালো রিকভারি হরমোন ক্ষরিত হয় রাত দশটা থেকে রাত দুইটার মধ্যে। বাকী সময়টায় আমরা যা ঘুমাই তা হলো বোনাস। আমাদের পূর্বপুরুষরা সূর্য ডোবার কিছু সময় পরই ঘুমোতে চলে যেতেন। আর তাদের থেকে বিবর্তিত হয়েই আমরা জন্মেছি। এখন আমরা আর্টিফিশিয়াল লাইট দিয়ে দিনকে রাতের চেয়েও বেশি আলোকিত করে ফেলতে পারি। আমরা  চাইলে ঘুমানোর এ সময়টাকে না মেনে নিজের ল্যাপটপে রাত তিনটে পর্যন্ত উল্টাপাল্টা সিনেমা দেখতে পারি। এটা একদম উচিত নয়। আমাদের মানুষদের এরকম ডিজাইন করা হয়েছে যেন অন্ধকার হলেই আমরা রেষ্ট নেই।

৮। সুন্দর একটা ঘুমের জন্য দরকার বেডরুমের
বেডরুমতো সবারই থাকে। হ্যা, থাকে। আমারমতে  আমাদের বেডরুম প্রয়োজন দুটি বড় কাজের জন্য একটি হচ্ছে ঘুম আর অন্যটি না থাক বলবোনা। এদুটোর বাহিরে বেডরুমকে ব্যবহার করা উচিত নয়। কিন্তু আমরাতো বেডরুমটাকে নিজেদের আমোদ প্রমোদের জায়গা বানিয়ে নিয়েছি। লোকজনতো আজকাল বিছানায় শুয়ে টিভি দেখতে দেখতে ঘুমায়। যেটা স্লিপ সুইসাইডের চেয়ে কম নয়। যদি কেউ কোয়ালিটি স্লিপের অভিজ্ঞতা অনুভব করতে চায় তাহলে কোন কাজকেও বেডরুমে নিয়ে আসা উচিত নয়। নিজের বেডরুমকে একটা পবিত্র জায়গা বানান যেখানে শুধু শান্তি আর বিরাম প্লাবিত হয়। এতে আপনি একটি গভীর ঘুম পেতে পারেন।

৯। ঘুমের জন্য চিন্তামুক্ত থাকুন
রাতে বিছানায় মাথা রাখলেই দেখবেন দুনিয়ার সব দরকারি কথা মনে পড়ছে। এটা না কেন, ওটা কেন এটাইপের প্রশ্নগুলোও ঘুমাতে গেলে মাথায় জন্মায়। এগুলো আসে হতাশা আর দুশ্চিন্তা থেকে। তাহলে চিন্তামুক্ত থাকবেন কি করে? সমস্যা যত পৃথিবীতে সমাধানও আছে তত। চিন্তামুক্ত থাকতে ঘুমাতে  যাবার আগে ৫ মিনিট মেডিটেশন করতে পারেন। এটা টনিকের মতো কাজ করবে।

১০। সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠবেন
সত্যি যদি আপনি সকাল সকাল ঘুমোতে চান তাহলে আপনাকে প্রথমে সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠতে হবে। মানুষের ঘুমের একটা ডিজাইন করা থাকে। আপনি যদি সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠতে পারেন তাহলে আপনি নিজেকে ঐ ডিজাইনের সাথে যুক্ত করতে পারলেন। প্রথমদিকে সকালে ঘুম থেকে উঠতে কষ্ট হতে পারে। কষ্ট করে ১-২ সপ্তাহ কন্টিনিউ করলে দেখবেন এটা আপনার অভ্যাসে পরিনত হয়ে যাবে। এবং আপনি সকাল সকাল ঘুম থেকে এনার্জি নিয়ে জাগার আনন্দ অনুভুতি পাবেন।

এবার আপনিও চেষ্টা করুন এই নিয়মগুলো মেনে চলার । তারপর আমাদের কমেন্টস করে জানান এনিয়মগুলো ঠিক আপনার জীবনে কতটুকুন উপকারে এসেছে। ধন্যবাদ।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url