যদি চান ভাল সুযোগ তবে দ্বিতীয় চাকরীর ইন্টারভিউ দেয়ার আগে এগুলো জানুন
যে কোনো অবস্থায় মানুষ নিজের অবস্থার ইতিবাচক পরিবর্তন চায়। ফলে অন্য কোথাও ভালো কোনো চাকরির অফার পেলে আগের চাকরিটি ছেড়ে দেন এ রকম অনেকেই রয়েছেন। ফলে দ্বিতীয়বার বা তৃতীয়বার আপনাকে বসতে হয় ইন্টারভিউ বোর্ডের সামনে। এ সময়ের জন্য নিজেকে আরো ভালোভাবে প্রস্তুত করে নিন।
কারণ, দ্বিতীয় অথবা তৃতীয়বার ইন্টারভিউ বোর্ডে বসার পর একটি প্রশ্ন সব সময়ই কমন পড়ে, তা হলো আপনি আগের চাকরিটি ছাড়লেন কেন? এই প্রশ্নের উত্তরটা হতে হবে যৌক্তিক ও বুদ্ধিদীপ্ত। তাই দ্বিতীয়বার ইন্টারভিউ বোর্ডে প্রবেশের আগে নিজেই কিছু প্রশ্ন রেডি করুন। একই সাথে তৈরি করুন উত্তরগুলোও।
কোথাও থেকে চাকরি ছেড়ে নতুন চাকরির জন্য আবার ইন্টারভিউ দিতে গেলে বোর্ড যে প্রশ্নগুলো আপনাকে করতে পারে সেগুলোর ধরন হতে পারে এমনঃ
১. আপািন আগের চাকরিটা ছাড়লেন কেন?
২. এ প্রতিষ্ঠানে আপনার কতদিন চাকরি করার ইচ্ছা আছে?
৩. আপনার পূর্ববর্তী পদ কি ছিল? আপনার বেতন কত ছিল?
৪. আপনার চাকরির জন্য এই প্রতিষ্ঠানকে বেছে নিলেন কেন?
৫. আপনার এই চাকরি বা প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে কিছু কি জানার আছে?
প্রশ্নকর্তার কাছ থেকে এই প্রশ্নগুলো যখন আসবে, আপনাকে মনে রাখতে হবে এগুলোর পেছনে অন্য কোনো প্রশ্ন লুক্কায়িত আছে। ফলে এর উত্তরগুলো আপনাকে সতর্কতার সাথেই দিতে হবে। এগুলো কিছুটা জটিল প্রশ্ন। ইন্টারভিউ বোর্ডে সাধারণত চাকরি প্রার্থীগণ নার্ভাস থাকে। তাই আগে থেকে এর উত্তর নিজের মতো করে গুছিয়ে রাখলে সঠিক সময়ে সঠিক উত্তর দেয়া আপনার জন্য সহজ হবে।
মনে রাখবেন, প্রশ্নকর্তা আপনার উত্তর বা কণ্ঠে এমন কোনো আভাস যেন না পায় যে, আপনি পূর্ববর্তী চাকরি থেকে কোন কারণে বরখাস্ত হয়েছেন বা আপনার পূর্ববর্তী কাজে আপনি বোর হয়ে গেছেন। আর এটা যদি প্রমাণিত হয়, চাকরিদাতাকে আপনার যোগ্যতা ও স্থায়িত্ব সম্পর্কে সন্দিহান হয়ে উঠতে পারে, যা চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রে নেতিবাচক ভূমিকা রাখবে। আলোচিত প্রশ্নগুলোর কয়েকটি সম্ভাব্য উত্তর দেয়া হলো। এটা থেকে আপনার উত্তর কী হতে পারে তা আপনাকেই নির্বাচন করতে হবে।
প্রশ্ন: আপনি আগের চাকরি ছাড়লেন কেন?
আমার পূর্বের প্রতিষ্ঠানটি পুনর্গঠিত হওয়ায় আমার বিভাগটি সাময়িকভাবে বন্ধ হয়ে যায়। এটা ঘটার আশঙ্কা আমার আগেই ছিল। তাই আমি নতুন এবং পূর্বের চেয়ে ভালো কাজের চেষ্টা করছিলাম। আমি আমার কাজকে ভালোবাসি। ফলে যেকোনো পরিবেশে আমার কাজকে প্রাধান্য দেয়াই আমার মূল উদ্দেশ্য। দুর্ভাগ্যজনকভাবে প্রতিষ্ঠানের অবস্থার কারণেই আমাকে নতুন চাকরি করার কথা চিন্তা করতে হয়েছে।
অথবা আমি সবসময় চ্যালেঞ্জিং পেশাকে প্রাধান্য দেই। আর আগের পেশায় আমি এতদিন ধরে কাজ করছি। কিন্তু সেরকম কোনো চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হইনি। তাই আমি নতুন চাকরি খুঁজছি, যা একই সাথে আমার কর্মসংস্থান ও মনের খোরাক হতে পারে। প্রকৃতপক্ষে যে কোনো কাজেই জব স্যাটিসফেকশন একটি মুখ্য বিষয়। নতুন কাজ খোঁজার পেছনে চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করে সামনে এগিয়ে যাওয়াই মূল উদ্দেশ্য।
অথবা আমার পূর্বের প্রতিষ্ঠানে তেমন কোনো সুযোগ-সুবিধা নেই। নিজেকে প্রকাশের তেমন কোনো সুযোগ ওই প্রতিষ্ঠান তার কর্মীদের দিতে চায় না। ফলে আমি ওই প্রতিষ্ঠান ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়েছি। আমার ক্যারিয়ার গোল (এড়ধষ) আরো কিছুটা বেশি, যা ওই প্রতিষ্ঠানে কাজ করলে সম্ভব হবে না বলে আমার মনে হয়।
তাই আমি আমার পূর্বের প্রতিষ্ঠান থেকে ভালো প্রতিষ্ঠানে চাকরি নেয়ার চেষ্টা করছি, যেখানে আমি আমাকে প্রকাশের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানের কল্যাণ সাধন এবং আমার ভবিষ্যৎ লক্ষ্যে পৌঁছতে পারি। এই তিনটি উত্তরের মধ্যে দুর্বলতম উত্তর হলো, আমি সব সময় চ্যালেঞ্জিং পেশাকে প্রাধান্য দেই, এই উত্তরটা সকলেই বা অধিকাংশই দিয়ে থাকে। চাকরিদাতা আপনার এই উত্তর থেকে দুইটি ধারণা পেতে পারেন।
আপনি আগের চাকরিতে বোর হয়ে গেছেন এবং ভবিষ্যতে এই প্রতিষ্ঠানের কাজেও আপনি বিরক্ত হয়ে যেতে পারেন এবং চ্যালেঞ্জিং কাজ খুঁজছেন এই অজুহাতে চাকরি ছেড়ে যেতে পারেন।
ক্যারিয়ার গোলকে প্রাধান্য দেয়াটা মাঝামাঝি উত্তর হিসেবে বিবেচনা করা যায়। কারণ, এটা স্বাভাবিক আপনি যদি হাই অ্যাম্বিসাস হয়ে থাকেন, অধিক দায়িত্ব নিতে আপনি আগ্রহী হবেন এবং তা সুষ্ঠুভাবে করতে সচেষ্ট থাকবেন। একজন অভিজ্ঞ প্রশ্নকর্তা আপনার মুখের ভাব এবং উত্তরের সামঞ্জস্যতা মিলিয়ে এই সিদ্ধান্তে আসতে পারেন যে, আপনি দায়িত্বশীল এবং আপনার ক্যারিয়ার গোল পরিপূর্ণ করা সম্ভব হচ্ছে না বলে আগের চাকরিটি ছাড়তে চাইছেন।
আর সবচেয়ে শক্তিশালী উত্তর হলো, আপনি আপনার পূর্বের কাজ নিয়ে সন্তুষ্ট। কিন্তু সাময়িক অসুবিধার জন্য আপনি নতুন চাকরি খুঁজতে বাধ্য হয়েছেন। এই উত্তর চাকরিদাতার জন্য ইতিবাচক। কারণ, চাকরিদাতা কোনো কর্মী নিয়োগ করার সময় প্রাধান্য দেয়, কর্মী কতদিন ওই প্রতিষ্ঠানে কাজ করবে তার ওপর। ফলে বড় সমস্যা না হলে চাকরিপ্রার্থী চাকরি ছাড়বে না। এটা চাকরিদাতার জন্য কমফোর্টেবল।
প্রশ্ন: আপনি এই প্রতিষ্ঠানে কত দিন কাজ করবেন বলে আশা করেন? আপনার আগের কর্মক্ষেত্রে আপনার পদ কি ছিল? আপনি সেখানে কী কী কাজ করতেন?
এই প্রশ্নগুলোর অর্থ হলো, আপনি কেন বর্তমানে কাজটিকে বেছে নিতে চেয়েছেন একজন প্রশ্নকর্তা আপনার মনোভাব জানতে এ ধরনের কৌশল অবলম্বন করতে পারেন। তাই প্রশ্নগুলোর উত্তরও আপনাকে একটু ঘুরিয়েই দিতে হবে। আপনাকে ভেবে বের করতে হবে প্রশ্নকর্তাকে কোন উত্তরের মাধ্যমে স্যাটিসফাইড করতে পারবেন।
এই প্রশ্নগুলোর সঠিক অথবা ভুল উত্তর বলে কিছু নেই। এগুলোর উত্তর নির্ভর করে চাকরিপ্রার্থীর বুদ্ধিমত্তা, জ্ঞান এবং উত্তর দেয়ার ধরনের ওপর। এ ধরনের প্রশ্নের উত্তর চাকরিদাতার কাছে আপনার অবস্থান শক্ত অথবা নড়বড় করে দিতে পারে। ফলে উত্তর দিন বুঝেশুনে, সপ্রতিভভাবে। আপনি চাকরিপ্রার্থী হলে এই প্রশ্নগুলোর উত্তর খুঁজে বের করার চেষ্টা করুন। একটু বেশি সময় দিন এসব জটিল প্রশ্নের উত্তর নির্ধারণ করতে।
সব সময় চেষ্টা করুন সত্য এবং সঠিক উত্তর দিতে। যদি কোনো বিষয় আপনি আপনার প্রশ্নকর্তাকে জানতে না চান সচেতনভাবে, সুকৌশলে তা এড়িয়ে যান। এটা একটা প্র্যাকটিসের বিষয়। প্রশ্নকর্তার কোনো উত্তর সরাসরি না, জানি না, মনে নেই বলবেন না। সম্ভাব্য উত্তর দেয়ার চেষ্টা করুন। তবে ভুল উত্তর দেয়ার চেয়ে জানি না বলাটা ভালো। সেটা নমনীয়ভাবে বলুন।
বিশ্ব মন্দায় চাকরির দুষ্প্রাপ্যতা আরো এক ধাপ বেড়েছে। শিক্ষিত বেকারের সংখ্যাও বেড়েছে একই সাথে। চাকরির ইন্টারভিউ আপনার আইকিউ, মেধা, বুদ্ধি ও জ্ঞান প্রকাশের মাধ্যমে এবং প্রতিযোগী আপনারই মতো যোগ্য কেউ। ফলে তার চেয়ে আর একটু বেশি যোগ্য হতে হবে আপনাকে। প্রমাণ করতে হবে আপনিই সেরা। চাকরি আপনার নিশ্চিত।