যেভাবে মাংস সংরক্ষণ করবেন

মাংস(Meat) সবসময় টাটকা রান্না করা ভালো। তবে কোরবানির সময় প্রয়োজনের অতিরিক্ত হওয়ায় তা সরক্ষণের প্রয়োজন হয়ে থাকে। সাধারণত এই মাংসগুলো অনেক দিন পর্যন্ত থাকে, তাই প্রয়োজন হয় সঠিক সংরক্ষণের। অনেকের আবার ফ্রিজে ডিপ তুলনামূলকভাবে ছোট থাক, আলাদা ডিপ ফ্রিজ(Deep freeze) না থাকাতে পড়েন বিপাকে। ছুটতে হয় তাই আত্মীয় বা পাশের বাসায়। 


কিন্তু ফ্রিজ(Fridge) না থাকলেও মাংস সংরক্ষণ করতে পারবেন নিমিশেই। তবে আমাদের খেয়াল রাখতে হবে মাংস(Meat) উচ্চমানসম্পন্ন আমিষ জাতীয় খাবার। এটি রাসায়নিক ও এনজাইমেটিক গঠনগত কারণে বাইরের আর্দ্রতা, আলো, তাপ, জীবাণু, অক্সিজেন(Oxygen) প্রভৃতির প্রভাবে পচনের ফলে মাংস অনেক সময় খাওয়ার অনুপযোগী হয়ে পড়ে, যা থেকে ছড়াতে পারে বিভিন্ন রোগ(Disease)। ঘরে ও বাণিজ্যিকভাবে বিভিন্ন উপায়ে মাংস(Meat) সংরক্ষণ করার কৌশল ব্যবহার করে আসছে, যা এখন আরও উন্নত হয়েছে। যার মধ্যে আদার গুঁড়া, মিট এনহ্যান্সার, সয়া প্রোটিন পাউডার, ভিনেগার(Vinegar), কিউরিং সল্ট, ভেজিটেবল প্রোটিন, পাপরিকা পাউডার(Paprika powder), সেলারি পাউডার এবং আলু দিয়ে ঘরোয়া পদ্ধতিতে মাংস সংরক্ষণ করা যায়। মাংস সংরক্ষণে কয়েকটি পদ্ধতি উল্লেখ করা হলো-

ফ্রিজিং: সবচেয়ে সহজ পদ্ধতি হচ্ছে ডিপ ফ্রিজে মাংস(Meat) সংরক্ষণ করা। মাংসে ৫০-৭৫ ভাগ পানি থাকে। এই পানি পচনশীল জীবাণু সংক্রমিত হওয়ার ঝুঁকি তৈরি করে। তাই শূন্য ডিগ্রি ফারেনহাইট তাপমাত্রার নিচে ফ্রিজে মাংস সংরক্ষণ করা উচিত এবং ২০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডের নিচে ওই পানির শতকরা প্রায় ৯৮ ভাগই ক্রিস্টাল হয়ে পচন রোধ করে। তবে এ সময় কিছু বিষয় খেয়াল রাখতে হবে। যেমন- সঠিকভাবে মাংস(Meat) সংরক্ষণ করতে হলে এগুলো কাটতে হবে স্লাইস করে। অর্থাৎ পাতলা করে। একেবারে অনেক মাংস একসঙ্গে না রেখে ছোট ছোট প্যাকেটে মাংস(Meat) রাখা ভালো। দীর্ঘদিন ফ্রিজে মাংস সংরক্ষণের জন্য চর্বি(Fat) সরিয়ে ফেলতে হবে। আমরা ফ্রিজে মাংস সংরক্ষণে প্লাস্টিক ব্যাগ বা বক্স ব্যবহার করি। তবে এ ক্ষেত্রে ভ্যাকিউম বা সিল্ড ব্যাগ ব্যবহার করা স্বাস্থ্যসম্মত হয়। ফ্রিজে সংরক্ষণের জন্য গরু বা খাসির মাংস ৮-১২ মাস এবং যে কোনো ধরনের মুরগির মাংস ৩-৬ মাসের বেশি সংরক্ষণ করা উচিত নয়।

জ্বাল দিয়ে মাংস সংরক্ষণ: যদি জ্বাল দিয়ে মাংস সংরক্ষণ করতে হয়, তবে সে ক্ষেত্রে মাংসে চর্বির পরিমাণ একটু বেশি থাকাই ভালো। কারণ এতে মাংস দীর্ঘদিন ভালো থাকে। প্রথমে মাংস(Meat) ভালোভাবে ধুয়ে বড় একটা হাঁড়িতে নিন। এবার হলুদ ও লবণ(Salt) মিশিয়ে পরিমাণ মতো পানি দিয়ে মাংস জ্বাল দিন। এ পদ্ধতিতে দিনে কমপক্ষে দু’বার নিয়ম করে মাংস জ্বাল দিতে হবে।

ফ্রিজ ছাড়া মাংস সংরক্ষণ: যাদের ফ্রিজের ডিপ ছোট বা রাখার জায়গা পাচ্ছেন না, তারা চাইলে রোদে শুকিয়ে মাংস(Meat) সংরক্ষণ করতে পারেন। তবে কিছুটা কষ্ট করতে হবে। এই পদ্ধতিতে মাংস সংরক্ষণ করতে চাইলে কোনো চর্বি(Fat) রাখা যাবে না। মাংস(Meat) পরিষ্কার করে ধুয়ে ছোট টুকরা করে একটি লম্বা তারে একটার পর একটা গেঁথে নিতে হবে। কাপড় শুকানোর মতো করে ছাদে বা বারান্দায় গাঁথা মাংস টানিয়ে দিন। এ ছাড়া চুলার ওপরে তার বেঁধেও আগুনের তাপে মাংস শুকানো যায়। এ উপায়ে মাংস সংরক্ষণ করলে মাংস(Meat) একদম শুকিয়ে যায়, ফলে দীর্ঘদিন তা ভালো থাকে। ছাদে মাংস শুকাতে হলে পাতলা কাপড় বা নেট দিয়ে মাংস ঢেকে দিন। এতে করে ধুলাবালু পড়ে মাংস নোংরা হবে না। পরপর ৫-৬ দিন মাংস রোদে দিন। মাংস শুকিয়ে একদম শক্ত হলে মুখ বন্ধ করা পাত্রে বা টিনের কৌটায় মাংস(Meat) ভরে ভালো করে মুখ বন্ধ করে রাখুন। মাঝে মাঝে কৌটায় ধরে মাংস রোদে দিন। তাহলে পোকার আক্রমণ হবে না। রোদে শুকানো মাংস রান্না করার কমপক্ষে ১ ঘণ্টা আগে হালকা গরম পানিতে(Hot water) ভিজিয়ে রাখুন। এতে মাংস নরম হবে।

স্মোকিং পদ্ধতি: এটি বেশ পুরোনো একটি পদ্ধতি। যেখানে ৩০০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রায় মাংস(Meat) পোড়ানো হয়। আবার কোল্ড স্মোকিং(Cold smoking) পদ্ধতিতে ১২ থেকে ২৪ ঘণ্টা ধরে স্মোকিং আগুনে ৮৫ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রায় পোড়াতে হয়। ফলে তাপের ধোঁয়ায় মাংসের মাইক্রোবসগুলো নষ্ট হয়ে যায়। বর্তমানে অবশ্য এই পদ্ধতির জন্য কিছু তরল স্মোক প্রিপারেশন পাওয়া যায়, যা সাধারণত মাংস(Meat) ব্যবসায়ীরা ব্যবহার করে থাকেন।

সল্টিং পদ্ধতি: খাওয়ার লবণ, কিউরিং লবণ, মসলা এবং ব্রাউন চিনি, সোডিয়াম নাইট্রেট(Sodium nitrate) ও সোডিয়াম ল্যাকটেট দিয়ে মাংস(Meat) মেখে ২৪ ঘণ্টা রেখে ফ্রিজে ১ মাস পর্যন্ত সংরক্ষণ করা যায়। এ পদ্ধতিতে মাংস সবচেয়ে বেশি ফ্রেশ এবং পুষ্টিগুণসম্পন্ন হয়ে থাকে।

মাংস কাটা, প্যাকেট করা ও ঠান্ডা করায় সতর্কতা প্রয়োজন।

১. কাঁচা মাংস(Meat) যত দ্রুত সম্ভব ডিপ ফ্রিজে সংরক্ষণ করুন।

২. মাংস বাতাসবিহীন প্যাকেটে রাখতে হবে। প্লস্টিকের প্যাকেট বা অ্যালুমিনিয়াম(Aluminum) ফয়েল ব্যবহার করা যায়। কাঁচা মাংসের পানি যতটা সম্ভব ঝরিয়ে কাটবেন। মাংসে যত পানি থাকবে, ততই এর মধ্যে ব্যাকটেরিয়ার বিস্তার ঘটবে।

৩. ডিপ ফ্রিজে আঁটোসাঁটো করে না রেখে একটু আলাদা করে রাখা ভালো।

৪. রান্না করা মাংস(Meat) ফ্রিজে রাখতে হলে ভাগ ভাগ করে পৃথক পাত্র বা কনটেইনারে রাখবেন। একেকবার খাবার সময় একেকটি কনটেইনার বের করে গরম করবেন।

৫. কাঁচা মাংস ফ্রিজের নরমালে সর্বোচ্চ তিন-পাঁচ দিন রাখা যায়।

৬. সাধারণত জবাইয়ের অন্তত ৩-৪ ঘণ্টা পর্যন্ত মাংসে রক্ত(Blood) থাকে। সে অবস্থায় কোনোভাবেই মাংস(Meat) ফ্রিজে রাখা যাবে না।

৭. মাংস ঘরে আনার ৮-১০ ঘণ্টা পর লবণ দিয়ে ভালোভাবে ফুটিয়ে (১০০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রা) নিলে মাংস ভালো থাকবে। এর ফলে মাংসের ভেতরের অন্যান্য জীবাণু(Germ) মরে যায়। এতে গরমকালে ১২ ঘণ্টা এবং শীতকালে ২৪ ঘণ্টা মাংস ভালো থাকে।

৮. মাংসের টুকরা কাঁটাচামচ বা ছুরি দিয়ে কেঁচে লবণ ও সঙ্গে লেবুর রসের(Lemon juice) মিশ্রণে ডুবিয়ে নিন। যাতে ভালোভাবে মিশ্রণ মাংসের ভেতর ঢোকে। এভাবে রাখলে মাংস(Meat) অনেক দিন ভালো থাকবে।

৯. ফ্রিজে পোটলা করে মাংস(Meat) না রেখে যদি বিছিয়ে প্যাকেট করা হয়, তবে বেশি দিন ভালো থাকে।

১০. মাংস(Meat) যখন ডিপ ফ্রিজে সংরক্ষণ করা হবে, তখন প্যাকেটে সে দিনের তারিখ লিখে রাখতে হবে। এতে বোঝা যায়, মাংস পুরোনো হয়ে নষ্ট হয়ে গেল কিনা।

Was Publish all This Topic Related Article. All Receipe Tips,Cooking,Fast Food Receipe,রান্নার আইডিয়া,নিত্য নতুন রেসিপি,রেসিপির বই,ফাস্ট ফুড রেসিপি,Cooking School,Cooking Food,Fast Food,Fast Food Restaurant and More Usa Receipe Guide.

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url