ডিপ কন্ডিশনিং হোক বাড়িতেই

শেষ কবে একটা হেয়ার স্পা(Hair spa) করেছিলেন মনে আছে? যেদিন থেকে লকডাউনের জেরে বিউটি পার্লার(Beauty parlor) আর সালোন বন্ধ হয়েছে, সেদিন থেকে যেন সবরকম পরিচর্যাতেও দাঁড়ি পড়ে গেছে! যাদের চুল(Hair) শুষ্ক প্রকৃতির, তাদের বিশেষভাবে অসুবিধে কারণ নিয়মিত পরিচর্যার অভাবে চুল আরও শুকনো, বিবর্ণ হয়ে যায়। শুধু কন্ডিশনার(Conditioner) দিয়ে তার ভোল পালটানো যায় না। এমনকী, স্বাভাবিক চুলেও যদি দিনের পর দিন ঠিকমতো যত্ন নেওয়া না হয়, তারও জেল্লা নষ্ট হয়ে যেতে পারে।

এখন বাড়িতে কতটুকুই বা চুলের যত্ন(Hair care) নিতে পারেন আপনি? নিয়মিত শ্যাম্পু, আর তারপরে কন্ডিশনিং? আগেই বলেছি, শুষ্ক চুলের পক্ষে এটুকু পরিচর্যা যথেষ্ট নয়, তার দরকার ডিপ কন্ডিশনিং। স্বাভাবিক চুল আর তেলতেলে চুলেও সপ্তাহে একবার বা দু’ সপ্তাহ অন্তর একবার ডিপ কন্ডিশনিং করালে চুলের ঝলমলেভাব বজায় থাকে, চুল(Hair) মজবুতও হয় গোড়া থেকে। আর একটু হাতে সময় থাকলে কিছু সাধারণ রান্নাঘরের উপাদান দিয়েই সেরা ফেলা যায় ডিপ কন্ডিশনিং(Conditioning), তার জন্য পার্লার খোলার অপেক্ষায় থাকার দরকার নেই মোটেই, আর লকডাউনের সুবাদে হাতে সময়টাও এখন কিঞ্চিত আছে! ভাবছেন কীভাবে বাড়িতে করবেন ডিপ কন্ডিশনিং? রইল টিপস।

টক দই
হাতের কাছে সহজে পাওয়া যায় এমন তালিকার উপরদিকেই রয়েছে টক দই(Sour yogurt)। দইয়ের ল্যাকটিক অ্যাসিড আপনার স্ক্যাল্প এক্সফোলিয়েট করে জমে থাকা সমস্ত তেলময়লা সরিয়ে দেয় আর সেই সঙ্গেই প্রতিটি চুল(Hair) কোমল আর মসৃণ করে তোলে। যাঁদের চুল তেলতেলে ধরনের, তাঁরা চুলে ডিপ কন্ডিশনিং করতে চাইলে চোখ বন্ধ করে টক দই বেছে নিতে পারেন। চুলে বাড়তি জেল্লা আসবে, খুসকির সমস্যাও থাকবে না।

কীভাবে লাগাবেন: প্রথমে চুলে শ্যাম্পু(Shampoo) করে নিন। কন্ডিশনার লাগানোর দরকার নেই। চুলটা মুছে শুকিয়ে নিন। মোটামুটি শুকিয়ে গেলে চুলের আগা থেকে গোড়া পর্যন্ত দই মেখে নিন, এভাবে আধ ঘণ্টা থাকুন। হয়ে গেলে হালকা গরম পানিতে ধুয়ে ফেলবেন।

অ্যালো ভেরা
এখন অনেকেই টবে অ্যালো ভেরা রাখেন। চুলে কোমল, মসৃণভাব আনতে অ্যালো ভেরা জেল(Aloe vera gel) খুবই কাজের। কারণ এই জেলের বেশিরভাগটাই জলীয় উপাদান যা চুলে আর্দ্রতা ধরে রাখতে সাহায্য করে। স্ক্যাল্পে অ্যালো ভেরা জেল ঘষে ঘষে মাখলে তা চুল ওঠাও বন্ধ করতে সক্ষম।

কীভাবে লাগাবেন: অ্যালো ভেরা পাতা কেটে আধকাপ বা তার একটু বেশি পরিমাণ (চুলের দৈর্ঘ্য অনুযায়ী) জেল বের করে নিন। বাটিতে জেল নিয়ে কাঁটা চামচ দিয়ে ঘেঁটে একটু মসৃণ আর পাতলা করে নিতে হবে। এবার চুলে শ্যাম্পু করুন আগের মতো, কন্ডিশনার দরকার নেই। চুল(Hair) থেকে শ্যাম্পু ধুয়ে বাড়তি ভেজাভাবটা তোয়ালে দিয়ে মুছে ফেলুন। এবার চুলের আগা থেকে গোড়া পর্যন্ত অ্যালো ভেরা জেলটা মেখে নিন। আধঘণ্টা রেখে কুসুম গরম পানিতে ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে একবার লাগালে দারুণ ভালো ফল পাবেন।

মধু আর নারকেল তেল
প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই এই দুটি উপাদান মজুত থাকে। আর এই দুটি উপাদানই চুলের খসখসে রুক্ষ ভাব কমিয়ে মখমলি কোমল করে তোলার ব্যাপারে সিদ্ধহস্ত! এমনিতেই মধু চুলের আর্দ্রতা রক্ষা করতে সেরা, তার উপর নারকেল তেল(Coconut oil) চুলের গোড়ায় গভীরে পুষ্টি জোগায়। তাই এই দুটি উপাদান যোগ হলে তা চুলের পক্ষে খুবই উপকারী!

কীভাবে লাগাবেন: দু’ টেবিলচামচ নারকেল তেলে এক টেবিলচামচ মধু(Honey) মিশিয়ে নিন। এবার এই মিশ্রণটি চুলে খুব ভালো করে মেখে নিন। হয়ে গেলে চুলটা রাবার ব্যান্ড বা শাওয়ার ক্যাপে আটকে আধ ঘণ্টা রাখুন। তারপর ভালো করে শ্যাম্পু করে নিন। এ ক্ষেত্রে কিন্তু শ্যাম্পুর পর কন্ডিশনার লাগাতে হবে!

মেয়োনিজ আর ডিম
ডিমের পুষ্টিগুণ নিয়ে নতুন করে কিছুই বলার নেই। সত্যি বলতে চুলের অন্যতম সেরা খাদ্য হল ডিম। আর মেয়োনিজের ফ্যাটি অয়েল(Fatty oil) চুলের আর্দ্রতা ধরে রাখতে দারুণ উপযোগী।

কীভাবে লাগাবেন: বাটিতে আধ কাপ পরিমাণ মেয়োনিজ নিয়ে তাতে একটা ডিম আর এক চাচামচ অলিভ অয়েল দিয়ে খুব ভালো করে মিশিয়ে নিন। এবার চুলে শ্যাম্পু করে নিন, কন্ডিশনার(Conditioner) লাগাবেন না। চুলের বাড়তি পানি তোয়ালে দিয়ে শুষে নিয়ে আধভেজা চুলে খুব ভালো করে ডিম-মেয়োনিজের মিশ্রণটা মাখুন। শাওয়ার ক্যাপ দিয়ে বা কাঁটা দিয়ে চুলটা আটকে আধ ঘণ্টা রাখুন, তারপর ফের হালকা গরম পানিতে ধুয়ে আর একবার শ্যাম্পু করে নিন। এরপর কন্ডিশনার লাগাতে পারেন, কিন্তু তেলতেলে চুল(Hair) হলে এড়িয়ে যাওয়াই ভালো! সপ্তাহে একবার করতে হবে।

হট অয়েল থেরাপি
এটা ওটা মিশিয়ে প্যাক বানিয়ে লাগানোর ইচ্ছে বা সময় নেই? ভরসা রাখুন তেলে। অলিভ বা নারকেল তেল(Coconut oil) নিন, তাতে কয়েক ফোঁটা পছন্দসই এসেনশিয়াল অয়েল মেশান। তেলটা হালকা গরম করে নিন। এবার চুলটা কয়েকভাগে ভাগ করে নিন আর ওই গরম তেল আগা থেকে গোড়া খুব ভালোভাবে লাগিয়ে মাসাজ করুন। পুরো চুলে তেল মাখা হয়ে গেলে গরম পানিতে তোয়ালে ভিজিয়ে ভালো করে নিংড়ে জড়িয়ে রাখুন মাথায়। আধ ঘণ্টা পর শ্যাম্পু করে কন্ডিশনার(Conditioner) লাগিয়ে নিন। সপ্তাহে বারদুয়েক অনায়াসে করতে পারেন। চুল খুব রুক্ষ হলে তিনবারও করা যায়।


Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url