বিয়ের আগে বাবার কাছ থেকে পাওয়া কিছু উপদেশ
বিয়ের আগের দিন বাবা আমাকে ডেকে পাঠালেন, বললেন, চলো হাঁটতে যাই, কিছু কথা আছে।
মে মাসের বিকেল, বেশ গরম। আমরা পিতাপুত্র আগ্রাবাদ সিডিএ আবাসিক এলাকার ছয় নম্বর রোডে হাঁটছি।
বাবা বললেন, কাল তোমার বিয়ে। নতুন জীবনের শুরু। আজ থেকে অনেক বছর আগে তোমার দাদা বিয়ের আগে আমাকে কিছু উপদেশ দিয়েছিলেন, আমি সেগুলো রিপিট করতে চাই।
আমি কিছু বললাম না, লজ্জা লজ্জা লাগছে।
বাবা বললেন, তোমার দাদা বলেছিলেন,
১. নতুন বউকে পালকি করে কেন আনা হয় জানিস? তাকে তো গরুর গাড়িতেও আনা যেত। তা না করে পালকিতে আনা হয়, কারণ সে কত সম্মানিত তা বোঝানোর জন্য। পালকিতে নামানোর পর এ সম্মান কমানো যাবে না। সারাজীবন পালকির সম্মানেই তাকে রাখতে হবে।
২. নতুন বউ পালকিতে উঠে কী করে জানিস? কাঁদে। কেন কাঁদে? শুধু ফেলে আসা স্বজনদের জন্য না। নতুন জীবন কেমন হবে সে ভয়েও কাঁদে। তোর চেষ্টা হবে পালকির কান্নাই যাতে তার শেষ কান্না হয়। এরপর আর মাত্র দুটা উপলক্ষ্যে সে কাঁদবে। একটি হলো মা হওয়ার আনন্দে, আরেকবার কাঁদবে তুই চলে যাওয়ার পর। মাঝখানে যত শোক আসবে তুই তার চোখের পানি মুছে দিবি।
৩. স্ত্রী সবচে কষ্ট পায় স্বামীর বদব্যবহারে, দ্যাখ, আমি খুবই বদমেজাজি, কিন্তু কেউ বলতে পারবে না আমি তোর মায়ের সামনে কোনোদিন উঁচু গলায় কথা বলেছি।
৪. বিয়ে মানে আরেকটি মেয়ের দায়িত্ব নেওয়া। এটা ঠিকভাবে পালন না করলে আল্লাহর কাছে দায়ী থাকতে হয়।
৫. আরেকটি কথা, সব মেয়ের রান্নার হাত ভালো না, কিন্তু সবাই রান্না ভালো করার সর্বোচ্চ চেষ্টা করে। তাই রান্না নিয়ে বউকে কখনো খোঁটা দিবি না।
৬. বউয়ের মা-বাবাকে কখনো 'আমার শ্বশুর, আমার শাশুড়ি' এগুলো ডাকবি না। মা-বাবা ডাকবি। আগের ডাকগুলো কোনো মেয়ে পছন্দ করে না, তুই ওগুলো ডাকলে বউও আমাদের ওই ডাকেই ডাকবে। তুই ওনাদের সম্মান না করলে সে আমাদের সম্মান করবে না। এটাই নিয়ম। আল্লাহতালার পাল্লা সমান, এক পাল্লায় তুই যা করবি, আরেক পাল্লায় তিনি তাই রেখে দুই পাল্লার ওজন ঠিক রাখেন।
কথাগুলো বলে বাবা থামলেন, তারপর বললেন, আমি কিন্তু তোমার দাদাকে তাঁর কথাগুলো পালন করতে দেখেছি। আমি তা পেরেছি কিনা তা তোমার মা বিবেচনা করবেন।
আমি জানি আমার বাবাও দাদার মতো সব কথা রেখেছেন, কিন্তু কিছু বললাম না। কেমন যেন লজ্জা লাগছে।
বাবা বললেন, একথাগুলো বলে তোমার দাদা পুকুর পাড়ে দাঁড়িয়ে মোনাজাত ধরেছিলেন, চলো, আমরাও হাত তুলি।
সিডিএ ছয় নম্বর রোডের শেষ মাথায় একটি খাল ছিল। আমরা সে খালের পাড়ে দাঁড়িয়ে মোনাজাত ধরলাম।
আমি আসলে বাবার মুখ হয়ে আসা আমার স্বল্প শিক্ষিত কিন্তু অতি পরহেজগার দাদার কথাগুলো পুরোপুরি রাখতে হয়তো পারিনি, সে জন্য আমি ক্ষমাপ্রার্থী। তবে আমি কায়মনোবাক্যে প্রার্থনা করি, জীবনে তুমি মাত্র দুবার কাঁদো। প্রথম কান্না শেষ, বাকি রয়েছে আরেকটি কান্না।
এর বাইরে যাতে তোমাকে কাঁদতে না হয়।