গর্ভাবস্থায় দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তির টিপস
একটি মেয়ের জীবনে গর্ভকালীন সময় অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ন। স্বভাবতই এসময় বেশ কিছু দুশ্চিন্তা দেখা যায়। আজকে জানবো গর্ভাবস্থায় দুশ্চিন্তা মুক্তির টিপস।
প্রথমবার গর্ভবতী হওয়ার লক্ষন দেখা দেওয়ার পর অনাগত সন্তান নিয়ে মায়েদের দুশ্চিন্তা বেশি থাকে কয়েক গুন। গর্ভাবস্থায় একেবারে ভিন্ন কিছু উপসর্গ দেখা যায়। দেহের স্বাভাবিক পরিবর্তন, অর্থনৈতিক বিষয়, মানসিক নানান যন্ত্রনা শুরু হয়। শুরু হয় দুশ্চিন্তা। সবকিছু সুন্দরমতো হবেতো নাকি সমস্যায় পড়ে যাই। আমার সন্তান কেমন হবে? ছেলে হবে নাকি মেয়ে হবে।
একটি সুস্থ্য সবল শিশুর জন্ম দেয়ার জন্য খুব বেশি প্রয়োজন একজন সুস্থ্য সবল মায়ের। মায়ের সুস্থ্যতার জন্য দরকার দুশ্চিন্তা মু্ক্ত থাকা। তাহলে ঝটপট দেখে নেই গর্ভাবস্থায় দুশ্চিন্তা মুক্তির উপায়গুলো:
পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিন
অন্য যেকোন সময়ের চাইতে গর্ভাবস্থায় মায়েদের অনেক বেশি যত্নশীল হতে হয়। এসময় বিশ্রাম অনাগত শিশুর জন্যও খুব উপকারী। সময় দিন আপনার শিশুকে। কী, আপনি আশ্চর্য হচ্ছেন। ভাবছেন যে শিশু এখনো জন্মই নেয়নি তাকে কিভাবে সময় দিবো। আপনার যদি ধারনা হয়ে থাকে আমি ভুলভাল বকছি তাহলে বলবো আপনার ধারনা ভুল।
আপনার সাথে সন্তানের সুমধুর দৃঢ় মজবুত সম্পর্কের জন্য ভ্রুন হওয়ার ২৩ সপ্তাহ থেকেই কথা বলুন। তখন থেকেই শিশু সব কথা শুনতে পায়। ভালো কোন সংগীত শোনাতে পারেন। সংসারের কাজকর্ম কিছুটা মিনিমাইজ করুন। চেষ্টা করুন অপ্রয়োজনীয় কাজ কমিয়ে দিতে। আপনার স্বামীর সহায়তা নিন।
দুজনের বোঝাপড়ার মাধ্যমে কিছু কাজ ভাগ করে নিন। ক্লান্তি ক্লান্তি ভাব হলেই বিছানায় গা এলিয়ে দিন। কাজ সারা জীবন করা যাবে। আগে নিজেকে বড় কোন দূর্ঘটনার হাত থেকে নিজেকে বাঁচাতে হবে। আপনার শিশুটির কথাও চিন্ত করতে হবে।
মন খুলে হাসুন
আমরা সবাই কম বেশি জানি হাসলে মন ভালো থাকে, স্বাস্থ্য ভালো থাকে। অথচ, আমরা খুব হাসার উপলক্ষ্য ছাড়া হাসতে চাইনা। হাসির জন্য বড় কোন কারণ খুজবেন না। চারপাশে অনেক কিছু আছে যা দেখে চাইলেই আপনি হাসতে পারবেন। এতো জোর করছি কেন হাসির জন্য জেনে নিন-
- প্রান খোলা হাসি হৃদস্পন্দন স্বাভাবিক রাখে তাই হৃদরোগের ঝুঁকি কমে।
- আপনার মন মেজাজকে ঠান্ডা রাখতে সাহয্য করবে এক চিলতে হাসি
- হাসি খুশি থাকলে কাজ করার ক্ষমতা বাড়ে।
- অন্যের কাছে আপনাকে বিশ্বাসী করে তোলে
সুষম খাবার খান
সুষম খাদ্য ভালো খাদ্য এসময় সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন। ভালো খাদ্য স্বাস্থ্য ভালো রাখবে এতে আপনার অনাগত শিশুও বেড়ে উঠবে সঠিক স্বাস্থ্য এবং পুষ্টিতে। মন ভালো রাখার জন্যও সুষম ও ভালো খাদ্যের প্রয়োজন রয়েছে।
গর্ভাবস্থায় যেখাবার গুলো স্বাস্থ্য ভালো রাখার পাশাপাশি আপনাকে রাখবে নির্ভার। তার একটা লিস্ট দেখে নেই ঝটপট:
- তেল এবং চর্বিযু্ক্ত মাছ । মাঝে মাঝে সামুদ্রিক মাছ খেতে পারেন।
- বাদাম এবং শস্যদানা জাতীয় খাদ্য।
- ডিম হতে পারে আদর্শ খাবার। এতে থাকা কোলাইন শিশুর মস্তিষ্ক বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে।
- বলা হয় গর্ভবতী মায়েদের জন্য সেরা খাদ্য কলা। একটি কলায় কমবেশি ১০০ ক্যালরী শক্তি থাকে।
- সম্ভব হলে মিষ্টি আলু খাবেন।
- গর্ভাবস্থায় আয়রনের অভাব দেখা যায় তাই পরিমিত পরিমানে গরুর মাংশ খাওয়া যেতে পারে।
- লাল আটার রুটি।
- তাছাড়া চর্বিমুক্ত দুধ, বাদামের মাখন, ওটমিল, স্যালমন মাছ, গ্রীক, ব্রোকলি, মটরশুটি, পণির ইত্যাদি খুবই আদর্শ খাবার হিসেবে বিবেচিত হয়।
নিয়মিত ব্যয়াম করুন
ব্যয়াম করার অভ্যাস থাকুক আর নাই থাকুক আপনাকে ব্যয়াম করতে হবে। এসময় নিয়ম করে হাঁটা কিংবা সাঁতার কাটলে আপনার শরীর ও মন দুটোই ভালো থাকবে। মেডিটেশন এখন আর নতুন নয়। প্রয়োজনে মেডিটেশন করতে পারেন। এটি আপনার মনকে স্থির করে প্রফুল্ল করে তুলবে। চাকরিজীবি মহিলারা যখন একটানা কাজ করেন তখন গর্ভবতীর স্বাস্থ্য ও শিশুর স্বাস্থ্য ভালো থাকবে।
প্রসবের জন্য মানসিক প্রস্তুতি নিন
বাচ্চা প্রসব বিষয়ে যদি কোন বিষয়ে অজানা থাকে জেনে নিন। তানাহলে অজানা ভীতি তৈরী হবে। অন্য যেকোন অজানা বিষয়ে আপনার ডাক্তারের সাথে কথা বলুন। অথবা এসব বিষয়ে জানতে অনলাইনের সহায়তা নিতে পারেন। যদি সিজার করার মনোভাব থাকে তাহলে তার সম্পর্কে পরিপূর্ন জানুন। সিজার পরবর্তী সময়ে চলাফেরা, নিয়ম নীতি গুলো আগেই জেনে নিতে পারেন। তাতে মনোবল বাড়বে।
সমস্যা নিজের মধ্যে না রেখে শেয়ার করুন
অযাচিত অনাকাঙ্খিত কোন সমস্যা দেখা দিলে তা প্রথমে স্বামীর সাথে শেয়ার করুন। হয়তো প্রথম দিকে আপনার স্বামী নাও বুঝতে পারে। এনিয়ে মন খারাপ করবেন না। সমস্যাটা হচ্ছে আপনার শরীরে তার শরীরে নয় এটা তার উপলব্দির বিষয়। সবার উপলব্দি নাও হতে পারে। সেজন্য সময় বুঝে সমস্যা শেয়ার করুন।
স্বামীর কাছে শেয়ার করতে না পারলে আপনার কোন বন্ধু যদি ইতিমধ্যে মা হয়ে থাকে তার সাথে শেয়ার করুন। এতে উপকার হতে পারে। তাছাড়া বাড়ির অন্য বড় অভিজ্ঞ কারো সাথেও শেয়ার করতে পারেন আপনার সমস্যা । যদি সেইফ মনে না হয় তাহলে ডাক্তারের সাথে শেয়ার করুন। মনে রাখবেন ডাক্তারের কাছে লজ্জা কিংবা দ্বিধা রেখে কোন কথা বলবেননা। তাহলে হয়তো সমস্যা বাড়তে পারে। সমস্যার কথা শেয়ার করে আপনি নির্ভার থাকুন।
কুসুম গরম পানিতে গোসল করুন
শরীরে অতিরিক্ত ব্যথা অনুভব হলে কুসুম গরম পানিতে গোসল করতে পারেন। স্বাভাবিক অবস্থার চাইতে গর্ভবস্থায় একজন গর্ভবতীর শরীর অনেক ভারী থাকে। কুসুম গরম পানিতে গোসলের পর নিজেকে হালকা লাগতে পারে। ব্যথা কিংবা শরীর ভারীর জন্য দুশ্চিন্তা না করে কুসুম গরম পানিতে গোসল করুন। চিন্তা মুক্ত থাকুন।
আনন্দদায়ক এবং অর্থবোধক কাজ করুন
এমন কিছু কাজ করুন যাতে আপনি আনন্দ পাবেন আবার তার আলাদা অর্থও থাকবে। যেমন ধরুন আপনার মনের অজানা কথা আপনার সন্তানকে লিখে পত্র লিখুন। সন্তান বড় হলে তাকে এগুলো পড়ার জন্য দিতে পারেন। নাও দিতে পারেন। সেটা সে সময়ের উপর নির্ভর করবে। এরকম লেখা লেখির মাধ্যমে আপনার স্ট্রেস কমে যাবে।
ঘরের কাজে সহযোগিতা নিন
প্রতিদিনের কাজ আপনার জন্য মানসিক চাপ তৈরী করতে পারে। এ চাপ থেকে মুক্তি পেতে আপনার পক্ষে করা সম্ভব এমন কাজ রেখে বাকী কাজগুলো করতে অন্যদের সহায়তা নিন। আপনি অন্যদের সহায়তা না নিলে পেন্ডিং কাজগুলো মানসিক যন্ত্রনার কারণ হতে পারে। তাই চাপমুক্ত থাকতে কাজ ভাগ করে দিন। চাপমুক্ত থাকবেন।
পর্যাপ্ত পরিমানে ঘুমাবেন
পরিমিত ঘুম ডিপ্রেশন কমায় স্বাস্থ্য সুরক্ষিত রাখে। তাই পর্যাপ্ত পরিমানে ঘুমানোর চেষ্টা করবেন। ঘুমানোর জন্য ভালো পরিবেশ দরকার।এতে ভালো ঘুম হয়। তারপরও যদি নিয়মিত ঘুম না হয় তাহলে উদ্বিগ্ন না হয়ে ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করুন।
গর্ভাবস্থায় কুসংস্কার এড়িয়ে চলুন
সবার অভিজ্ঞতা সবকাজে এক নয়। অন্যকারো খারাপ অভিজ্ঞতার কথা শুনে মন খারাপ করবেন না। সবার সাথে একরকম নাও হতে পারে। তাছাড়া অনাগত সন্তানের অমঙ্গল হবে বলেও অনেক কুসংস্কা চাপিয়ে দেওয়া হয়। সচেতন থেকে এগুলো এড়িয়ে যেতে হবে। কোন কোন কুসংস্কার সন্তান ও গর্ভবতী মায়েদের জন্য হুমকী স্বরুপ। যেমন ধরুন একসময় গর্ভবতী মায়েদের কম খাবার দেয়া হতো। মনে করা হতো এতে করে সন্তান খুবই স্বাস্থ্যবান হবে এবং প্রসবের সময় কষ্ট হবে। এধরনের কুসংস্কার কোনভাবেই মানা যাবেনা।
গর্ভাবস্থায় আরামদায়ক পোশাক পরুন
গর্ভাবস্থায় এমন পোশাক নির্বাচন করুন যেন চলাফেরা করতে অসুবিধা না হয়। আঁটাসাঁট পোশাক পরিহার করুন।জামার সাথে জুতাও যেন আরামদায়ক হয় সে বিষয়ে নজর দিন।
দুশ্চিন্তাও এক ধরনের ব্যধি। সব সময় এ ব্যাধিতে আমরা যেকেউ আক্রান্ত হতে পারি। গর্ভাবস্থায় এরোগ আরো জটিল আকার ধারন করতে পারে। দুশ্চিন্তা হচ্ছে মনে হলে দ্রুতই ডাক্তারের সাথে আলোচনা করুন।