পানি পান করছেন ! নিয়ম জানেন কি? জেনে নিন পানি পানের সঠিক নিয়ম

 


যদি আপনার স্কিন প্রবলেম, এসিডিটি, গাঁটে গাঁটে ব্যথা, আলসেমী ভাবলাগা হজমে সমস্যা অথবা মাথায় যন্ত্রনার মত সমস্যা থেকে থাকে গবেষনা অনুযায়ী তার পিছনে অন্যতম বড় কারণ সঠিক নিয়মে পানি পান না করা। কি অবাক হচ্ছেন!! পানি পানের আবার সঠিক নিয়ম কি? পানি পানের সঠিক সময় বলে কিছু আছে নাকি? উত্তর- হ্যা পানি পানের সঠিক নিয়ম রয়েছে। শুধু তাই নয় একজন মানুষ দৈনিক কত লিটার পানি পান করবে, বয়স অনুযায়ী কি পরিমান পানি পান করবে, দৈনিক কত লিটার পানি পান করবে এসব কিছুর একটা নিয়ম রয়েছে। এতোদিন ধরে জেনে আসছেন পানির অপর নাম জীবন আজ এই পোষ্ট থেকে জানতে পারবেন পানি পানের নিয়ম না মানলে এটি আপনার মৃত্যুর কারনও হতে পারে। আমাদের মাঝে ৯০% লোকই ভুল নিয়মে পাানি পান করে তার বাস্তব প্রমান হলো ভিডিওর শুরুতে বলা রোগ গুলো প্রায় আমাদের সবার মাঝেই রয়েছে।

তো চলুন পানির মত সহজ জিনিসটাও কি কি নিয়ম মেনে পান করবেন:

১। একবারে অনেক পানি পান করবেন না, ধীরে পান করবেন
দিনের অর্ধেকটা সময় পেরিয়ে গেছে পানি পান করার কথা ভুলে গেছেন। মনে হওয়ার সাথে সাথে একটা এক লিটারের বোতল নিয়ে ঢক ঢক পুরো গলায় ঢেলে দিলাম। আপনি কি জানেন এতে আপনার উপকারের চেয়ে ক্ষতি বেশি হলো। পানি পানের এ ভুল নিয়মটিকে মেডিকেল টার্মে ওয়াটার ইনটক্সিকেশন বা ওয়াটার পয়েজনিং বলা হয়ে থাকে। আমাদের শরীরের একটা নির্দিষ্ট ক্যাপাসিটি রয়েছে একবারে জল ধরে রাখার। এভাবে হঠাৎ প্রচুর পরিমাণে জল পান করলে আমাদের শরীরে রক্তের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। ফলে রক্ত থাকা বিভিন্ন এলেক্ট্রোলাইটস গুলি যার মধ্যে বিশেষ করে সোডিয়াম এর ঘনত্ব কমে যেতে থাকে। ফলে কোষের বাইরে থেকে ভেতরের দিকে জল ঢুকতে শুরু করে এবং ফলস্বরূপ কোষগুলি ফুলে উঠে।  এই ঘটনাটি যখন আমাদের ব্রেনের কোষগুলির সাথে ঘটে তখন মাথা যন্ত্রণা, ক্লান্তি, বমিভাব এরকম বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিতে শুরু হয়। এই অবস্থাকে মেডিকেল টার্ম অনুযায়ী হাইপোমেট্রেনিয়া বলা হয়ে থাকে।

এবার বক্তব্য হচ্ছে আপনি কিভাবে বুঝবেন আপনার শরীরে জলের পরিমাণ সঠিক আছে কিনা। আপনার ইউরিনের কালার মানে মূত্রের রং নির্দেশ করে আপনার শরীরে জলের পরিমাণ ঠিক আছে কি না। যদি আপনার ইউরিনের কালার গাঢ় হলুদ হয় তাহলে বুঝতে হবে আপনার শরীরে জলের অভাব রয়েছে।  যদি আপনার ইউরিনের কালার একবারে পারিষ্কার মানে সাদা দেখায় তাহলে বুঝবেন আপনার শরীরে জলের পরিমান বেশি রয়েছে। জলের ঘাটতি বা আধিক্য এর কোনটিই আমাদের শরীরের জন্য ভালো নয়।  আপনার ইউরিনের কালার যদি হালকা হলুদ (লাইট ইয়েলো কালার) দেখায় তবে বুঝবেন আপনার শরীরে জলের পরিমান সঠিক রয়েছে। তাই আপনার ইউরিনের কালার আপনার জন্য একটি ভালো ইন্ডিকেটর।

এছাড়াও আপনি যখন দাঁড়িয়ে কিংবা হাটতে হাটতে ঢক ঢক করে পানি পান করতে থাকেন তখন পানির সাথে সাথে অনেক গ্যাসও আপনার পেটে প্রবেশ করতে থাকে। তো উচিৎ কি?

ক.  একবারে ৩০০ মি.লি বা তিন ঢোকের বেশি পানি পান না করা।খ. পানি পানের সময় শান্তভাবে বসে বোতলে বা গ্লাসে মুখ লাগিয়ে আস্তে আস্তে পানি পান করা উচিৎ। যখন আপনি আস্তে আস্তে পানি পান করবেন তখন আপনার মুখের ভিতররের এনজাইমগুলো পানির সাথে মিশে আপনার পেটে গিয়ে হজমে সহায়তা করবে। তাহলে পানি পানের প্রথম নিয়ম হলো ধীরে পান করবেন।

২। খাওয়ার সময় পাানি পান করা
আপনিও কি তাদের মধ্যে একজন যে খেতে খেতে পানি পান না করলে চলেনা। আজকালতো আবার কোলড্রিংকস খেতে হয় যা আরো মারাত্মক বিপদজনক। যদি আপনার এই অভ্যাস থেকে থাকে তাহলে আপনারও প্রায় বদহজম এবং এসিডিটির সমস্যা দেখে  যাবে। যেমন, কাাঁচা খাবারটা আমরা রান্না করে খাই ঠিক তেমন সেই খাবারটা পেটে গিয়ে  বিভিন্ন পাঁচক রসগুলোর সাথে মিশে গিয়ে সে খাবারটির পাাঁচন ঘটায়। বলা চলে, পেটে যাবার পর বিভিন্ন পাাঁচকরস দিয়ে খাবারটি পুনরায় রান্না হয়। তারপর আমাদের শরীরে খাবারটা মিশে। এবার ভাবুন, আপনি যখন কড়াইয়ে খাবার রান্না করছেন তখন যদি কেউ বারবার উল্টোপাল্টা পানি ঢালতে শুরু করে তাহলে কি রান্নাটা আদৌ ঠিকভাবে হবে। খাবার খেতে খেতে যখন আপনি পানি পান করেন তখন আপনার পেটের ভিতর  একই ঘটনা ঘটে। পানি পান করার ফলে পাাঁচক রসগুলোর ঘনত্ব কমে যেতে থাকে। যার ফলে খাবার ঠিকমতো হজম হতে পারেনা। ফলস্বরূপ- বদহজম, এসিডিটি এসমস্ত সমস্যা দেখা যায়। তাহলে করনীয় কি?

খাবার শুরু করার অন্তত ৩০(ত্রিশ) মিনিট পূর্বে এবং খাবার শেষ হবার ৩০ মিনিট পরে পানি পান করা।

৩। কখন পানি পান করার উত্তম সময় কখন?
আপনি হয়তো জেনেছেন আমাদের শরীরের প্রায় ৭৫% পানিতে পরিপূর্ন। এখান থেকে প্রতিদিন আবার মূত্র, ঘাম ও অন্যান্য প্রক্রিয়ায় ২ থেকে ২.৫ লিটার পানি বেরিয়ে যায়। তাই আমাদের প্রয়োজন প্রতিদিন বেরিয়ে যাওয়া  এই পানি পূর্ন করা। কিন্তু কখন সময় এ পানি পান করার?
সকালে ঘুম থেকে উঠে ব্রাশ করার আগে কিংবা বেড টি নেয়ার আগে খুব ধীরে ৩০০ মিলি (তিন ঢোক) খাবেন। এতে সারারাত ধরে আমাদের মুখে জমা এনজাইমগুলো আমাদের পেটে গিয়ে হজম শক্তিতে সহায়তা করবে। আয়ুর্বেদে এক সোনার চেয়ে বেশি দামী বলা হয়। তারপর ব্রেকফাস্টের ৩০ মিনিট পূর্বে ৩০০ মিলি এবং ৩০মিনিট পরে ৩০০ মিলি। একই নিয়ম করে লঞ্চের ৩০মিনিট পূর্বে ৩০০মিলি এবং ৩০মিনিট পর ৩০০ মিলি। রাতে ডিনারের আগে ও পরে একই নিয়মে মোট ৬০০ মিলি পানি পান করবেন। শুধু এই সিম্পল নিয়মটুকু মানলেই আপনি প্রতিদিন ২-২.৫ লিটার পানি পান করতে পারবেন।
খাবারের আগে ও পরে যেন আপনার পানি পানের কথা মনে থাকে তার জন্য আপনার মোবাইলের এলার্ম ব্যবহার করতে পারেন অথবা পানি পানের জন্য একটি এন্ড্রয়েড এপস আছে সেটি ফলো করতে পারেন। এটি আপনাকে সারাদিনে কি পরিমানে পানি পান করেছেন কখন করেছেন সব হিসেব দিয়ে দিবে। এমনকি পানি পানের সময় হলেই বলবে পানি খাও।

৪। যেসময় পানি পান করা যাবেনা
এতক্ষন যেমন জানলাম পানি পান করার উত্তম সময় রয়েছে ঠিক তেমনি পানি পান করা বারণ এরকম কিছু সময়ও আছে। যেসময়গুলোতে পানি পান করা মানে নিজেই নিজের ক্ষতি ডেকে আনা। তো এবারে জেনে নেয়া যাক পানি পানের অনুত্তম সময়গুলো-

  • খাবার খেতে খেতে পানি পান করা যাবেনা।
  • টয়লেট করে আসার পরপর-ই  পানি পান করা ঠিক নয়।
  • রাতে ঘুমোতে যাওয়ার আগে পানি পান করা যাবেনা।  এতে মাঝরাতে টয়লেটের জন্য ঘুম ভেঙ্গে যেতে পারে। যা আমাদের স্লিপ  সাইকেলের ক্ষতি করে।
  • ব্যয়াম বা জগিং করার পরপরই প্রচুর পরিমানে জল পান করা ঠিক নয়। তখন, এমনিতেই শরীর থেকে ঘাম এবং ইউরিনের সাথে জল চলে যায়।
  • বাহির থেকে এসে গরমের সময় ফ্রিজের ঠান্ডা পানি পান করা যাবেনা। এতে সর্দি-কাশি সহ হজমের সমস্যা হতে পারে।

পানি পান করার কিছু সুন্নতী তরিকা রয়েছে। উপরোক্ত নিয়মগুলোও পানি খাওয়ার সুন্নতী ‍নিয়ম। আশা করছি পানি পান করার সঠিক সময় মেনে দৈনিক কত লিটার পানি পান করতে হবে বুঝে বয়স ‍অনুযায়ী পানি পান করবেন। এতে একদিকে যেমন আপনি সুস্থ থাকবেন অন্যদিকে সুস্থ্য থাকবে আপনার পরিবার। ভালো থাকবেন।
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url