চাকরী করতে চান? কি কি লাগে?
চাকরি পাওয়ার জন্য যে বিষয়গুলোর প্রতি খেয়াল রাখতে হয়:
১. নিজের যোগ্যতা ক. শিক্ষাগত যোগ্যতা খ. বিশেষ দক্ষতা/পারদর্শিতা বা হার্ড স্কিল গ. মানবীয় দক্ষতা/আচরণগত দক্ষতা বা সফ্ট স্কিল
২. পারিবারিক এবং/অথবা সামাজিক দায়-দায়িত্ব
৩. কর্মস্থলের অবস্থান, দূরত্ব ইত্যাদি
৪. প্রতিষ্ঠানের আকার প্রকার ও প্রকৃতি
৫. চাকরি বা ব্যবসায় ভবিষ্যৎ পেশাদারী ও অর্থনৈতিক উন্নতির সুযোগ ও সম্ভাবনা
পেশাগত ও ব্যক্তিগত যোগ্যতা: আমরা প্রায়ই যে প্রতিষ্ঠানে চাকরি খুঁজি সে প্রতিষ্ঠানের সুযোগ-সুবিধা, সুনাম ইত্যাদি সম্পর্কে যতটুকু ধারণা রাখি বা খোঁজ খবর নিই ততটুকু নিজের যোগ্যতা, দক্ষতা, দুর্বলতা, সম্ভাবনা এসব বিষয়ে যাচাই করতে সচেষ্ট হই না। এমন কি কখনো চাকরি পেয়ে গেলেও নিজের দক্ষতা, শিক্ষা এসব বাড়াতে চেষ্ট করি না।
এসবের ফলাফলে চাকরি দাতা প্রতিষ্ঠান ও কর্মী উভয়ই হয় ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে থাকেন অথবা দুই পক্ষ একে অপরের উপস্থিতির সর্বোচ্চ উপকারিতা বা উপযোগীতা থেকে বঞ্চিত হন। এমন অনাকাঙ্খিত অবস্থা থেকে দূরে থাকতে এবং নিজের পেশাদারিত্বের সম্ভাবনা অর্জন ও উৎকর্ষ সাধনে নিয়মিত এবং আজীবন নিজের যোগ্যতা যাচাই, শিক্ষার্জন, দক্ষতা ও জ্ঞানের উন্নতি সাধনে সচেষ্ট থাকাই উচিত।
যে কোন পেশায়, চাকরিতে বা ব্যবসাতেও আমরা একজন কর্মী, উদ্যোক্তা বা ব্যবস্থাপক হিসেবে নিজেদের দৃশ্যমান বা স্পষ্ট দেখা যায় এমন যোগ্যতাগুলোকেই বুঝে থাকি। বইয়ের ভাষায় এগুলোকে ইংরেজিতে বলে হার্ড স্কিল। বাংলায় বললে দাঁড়ায় কারিগরি বা প্রায়োগিক দক্ষতা। কিন্তু মানুষ হিসেবে আমারা আরও অনেক আপাত দৃশ্যমান নয় এমন যোগ্যতা, দক্ষতা বা দুর্বলতাগুলো সম্পর্কে অজ্ঞাত থাকি বা তেমন সচেতন হই না।
এমন দক্ষতাগুলোকে ইংরেজীতে বলে সফট স্কিল। বাংলায় অর্থ হয় আচরণগত দক্ষতা। এগুলোকে মানবিক বা সামাজিক দক্ষতাও বলা যায়। কেউ কেউ একে কোমল দক্ষতাও বলেন। যাই হোক, প্রায়োগিক দক্ষতার মতই আচরণগত দক্ষতাও সামাজিক পরিবেশে যেমন, তেমনই অর্থনৈতিক, ব্যবসায়িক বা পেশাগত পরিবেশেও খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই দুই ধরনের দক্ষতা, সেসবের যাচাই, উন্নয়ন ইত্যাদি নিয়ে আলোচনা করা হলো।
যোগ্যতা ও দক্ষতার রকমভেদ: পেশা নির্বাচনে বা কোন পেশার জন্য উপযুক্ত হতে গেলে নানা রকম যোগ্যতা ও দক্ষতার প্রয়োজন। সেগুলোকে আলোচনার সুবিধার্থে সেগুলোকে এভাবে উপস্থাপন করা যেতে পারে:
ক. শিক্ষাগত যোগ্যতা: স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথাগত ও প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা আর ডিগ্রীর গুরুত্ব ক্রমেই বেড়ে চলেছে তা সে যে কোন পেশায় হোক না কেন। হোক সে চাকরির জন্য বা ব্যবসার জন্য। এমনকি ব্যক্তিগত ও সামাজিক পরিমÐলে জীবন যাপনের জন্যও শুধু অক্ষরজ্ঞান হলেই চলছে না বরং প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা অপরিহার্য হয়ে পড়ছে।
ন্যুনতম শিক্ষাগত যোগ্যতা আজকালের খুব ‘নিচের স্তরের’ চাকরির শর্ত হিসাবে পরিগণিত হয়, হোক সে পিয়ন, দাড়োয়ান বা বার্তাবাহক। অতএব, আপনার শিক্ষাগত যোগ্যতার উপর চাকরি বা স্বাধীন যে কোন পেশার ধরন বা স্তর বহুলাংশেই নির্ভরশীল। আপনার শিক্ষাগত যোগ্যতা প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত যাই হোক না কেন তার সার্টিফিকেট বা সনদ সহ যাবতীয় প্রাসঙ্গিক প্রমাণাদি সংরক্ষণ করুন।
আজকাল চাকরি বা ব্যবসা করা কালীন সময়েও পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়া বা নতুন করে শুরু করার সুযোগও রয়েছে। আর সে জন্য উন্মুক্ত বিদ্যালয় ও উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় ইত্যাদি প্রতিষ্ঠান রয়েছে।
খ. বিশেষ দক্ষতা (হার্ড স্কিল) বা প্রায়োগিক দক্ষতা: কারিগরি বা প্রায়োগিক দক্ষতা হলো যে সব দক্ষতা যা কি না পরিমাপযোগ্য, সহজে বোঝা যায়, যাচাই করা যায়। প্রায়শই এসব দক্ষতা চাকরি বা কোন নির্দিষ্ট কাজের জন্য শর্ত হিসেবে উল্লিখিত থাকে। সাধারণত এসব দক্ষতা প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা, প্রশিক্ষণ, ওয়ার্কশপ ইত্যাদির অন্তর্ভুক্ত থাকে বা শিক্ষানবিশির মাধ্যমে বা নিজে নিজে অর্জন করা যায়।
প্রায়োগিক বা কারিগরি দক্ষতার উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করা যায়: লিখতে পারা, পড়তে পারা, টাইপ করতে পারা, কম্পিউটারে বিভিন্ন সফ্টওয়্যার ব্যবহার করতে পারা, গাড়ি বা অন্যান্য যানবাহন চালাতে পারা, রান্না করতে পারা, বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি মেরামত করতে পারা, হিসাব-নিকাশ করতে পারা এবং অন্যান্য এমন আরও অনেক কিছুই। এসব দক্ষতার মাত্রা সহজেই যাচাই বা পরীক্ষা করা যায়।
প্রায়োগিক দক্ষতার পাশাপাশি আচরণগত দক্ষতাও চাকরি বা ব্যবসা উভয়ের জন্যই জরুরী। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই চাকরির বিজ্ঞাপনে আচরণগত দক্ষতা শর্ত হিসেবে উল্লেখ করা না থাকলেও চাকরি দাতা চাকরি প্রার্থীর সাক্ষাৎকার গ্রহণ (ইন্টারভিউ, ভাইভা) বা অন্য কোন না কোন উপায়ে যাচাই করে নেন।
গ. মানবীয় দক্ষতা (সফ্ট স্কিল) বা আচরণগত দক্ষতা: প্রায়োগিক দক্ষতাগুলো হলো একজন ব্যক্তির ব্যক্তিত্ব, সহমর্মিতা, অন্যান্য মানুষের সাথে আচরন, নেতৃত্ব প্রদানের দক্ষতা, বাচনভঙ্গি, ইত্যাদি সহ এমন সব বৈশিষ্ট্য যা প্রায়োগিক দক্ষতার মত সহজে পরিমাপ বা যাচাই করা দুরূহ।
তবে প্রায়োগিক দক্ষতার মতই আচরণগত দক্ষতাও পেশাগত ও সামাজিক পরিমÐলেও অত্যন্ত জরুরী। কোন কোন ক্ষেত্রে এটি প্রায়োগিক দক্ষতার চাইতেও জরুরি হতে পারে যেখানে চাকরিদাতা ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান কর্মীর প্রায়োগিক দক্ষতা উন্নয়নে প্রশিক্ষণ প্রদানের পরিকল্পনা থেকেই কর্মী নির্বাচন করে থাকেন।
অতএব শিক্ষাগত যোগ্যতা ও প্রায়োগিক দক্ষতার পাশাপাশি আচরণগত বা আন্তঃব্যক্তিক (ইন্টারপার্সোনাল) দক্ষতাগুলোর প্রতিও খেয়াল রাখুন। আজকাল এসব বিষয়েও প্রশিক্ষণ, ওয়ার্কশপ, ইত্যাদির সুযোগ আছে। দুই ধরনের যোগ্যতার সমন্বয়েই বাস্তব পৃথিবীতে পেশাদারী সফলতা অর্জন সম্ভব।