উচ্চকাঙ্ক্ষী মানুষেরা পাঁচটি কাজ কখনোই করেন না


সব মানুষেরই ছোট বড় ইচ্ছা-আকাঙ্ক্ষা থাকে। পৃথিবীর তুচ্ছ চিন্তার মানুষদের তুচ্ছ লক্ষ্যে পৌঁছতে হয়ত আত্মবিশ্বাসের তেমন প্রয়োজন নেই। কিন্তু যারা বড় বড় চিন্তা করতে অভ্যস্ত, স্বপ্ন দেখেন বড় সফলতার- তাদের আত্মবিশ্বাসের মাত্রাটা রাখতে হয় অনেক উপরের দিকে। ধরুন, আপনার কাছে একটি আর আপনার এক বন্ধুর কাছে আরেকটি গাড়ি আছে।

আপনার গাড়িটি নিয়ে আপনি ১০০ কি.মি পথ যেতে চান আর আপনার বন্ধু তার গাড়িটি নিয়ে ১ কি.মি যেতে যায়। এখন মনে করুন কোনো গাড়িতেই যদি জ্বালানী দেয়া না হয় তাহলে লক্ষ্যে পৌঁছানোটা কার জন্য বেশি অসম্ভব হবে? অবশ্যই আপনার, কারণ আপনার লক্ষ্যটা আপনার বন্ধুর লক্ষ্যের চাইতে অনেক বড়।

আর বড় বলেই আপনার গাড়ির জন্য জ্বালানী বেশি প্রয়োজন। আর জীবনে ‘আত্মবিশ্বাসী’ নামক শব্দটিও ঠিক এমনই এক মানবীয় জ্বালানী যা আপনাকে সাহায্য করবে আপনার উচ্চাকাঙ্ক্ষায় পৌঁছে দিতে। আত্মবিশ্বাস মোটেই কোনো জন্মগত বিষয় কিংবা বিশেষ কোনো ব্যক্তির ‘সুপার পাওয়ার’ নয়।

নিজের মেধা আর বিচার-বুদ্ধির যথাযথ ব্যবহার করেই একজন মানুষ হয়ে ওঠে আত্মবিশ্বাসী। আর এজন্যই রবার্ট কিয়োসাকি একবার বলেছিলেন- “আত্মবিশ্বাস আসে কঠোর অভ্যাস আর প্রশিক্ষণের মধ্য দিয়ে।” একজন ব্যক্তিকে উচ্চমানের আত্মবিশ্বাসী হতে হলে অনেক সদগুণ যেমন অর্জন করতে হয়, তেমনি এড়িয়ে চলতে হয় অনেক ভুল কাজ। আসুন এবার জেনে নেয়া যাক এমনই কিছু কাজ যা প্রকৃত আত্মবিশ্বাসসম্পন্ন মানুষেরা কখনোই করেন না:-

তারা অন্যের সমালোচনা বা বিচার করেন না: একটা কথা আমাদের সবসময়ই মনে রাখা উচিত যে, অন্যের বাড়িতে কাদা ছুঁড়ে মারলে কখনো নিজের বাড়ি সুন্দর দেখায় না। নিজের বাড়িকে সুন্দর করে তুলতে হলে নিজেকেই তা সুন্দর করে সাজাতে হয়। আর এমনটা মনে-প্রাণে বিশ্বাস করেন বলেই উচ্চ আত্মবিশ্বাসী লোকেরা কখনোই অন্যের সমালোচনা করার চেষ্টা করেন না, তারা বরং পরিস্থিতি বোঝার চেষ্টা করেন।

বিশ্লেষণাত্মক মনোবিজ্ঞানের জনক, সুইস মনোবিদ, কার্ল ইয়ুং বলেছিলেন- “চিন্তা করাটা কঠিন আর তাই বেশিরভাগ মানুষই নিজের ধারণা দিয়ে অন্যকে বিচার করে বসে।” আত্মবিশ্বাসহীন তুচ্ছ লোকেরাই অন্যকে তুচ্ছ করে নিজের তুচ্ছতাকে ঢেকে রাখার ব্যর্থ চেষ্টা করে। কিন্তু প্রকৃত আত্মবিশ্বাসী লোকেরা নিজেদের কখনোই অন্যদের থেকে ছোট মনে করেন না এবং নিজের ধারণা দিয়ে কাউকে তুচ্ছ করে বিচার করার চেষ্টা করেন না।

তারা অজুহাত দেখান না: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম ফাউন্ডিং ফাদার বেঞ্জামিন ফ্রাঙ্কলিন বলেছিলেন- “যে লোক অজুহাত বানাতে পারদর্শী, সে অন্য কাজে কমই পারদর্শী।” অসফল মানুষদের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো, তাদের সবসময় তিনটি হাতের ব্যবহার থাকে- একটি ডান হাত, একটি বাম হাত আর অন্যটি অজুহাত।

যেকোনো সিচুয়েশনে তারা শেষের এই হাতটি (অজুহাত) ব্যবহার করে থাকে। নিজের ভুলের জন্য তারা কখনো অন্যকে, কখনো কোনো পরিস্থিতিকে দায়ী করে। কিন্তু আত্মবিশ্বাসী লোকেরা নিজের ভুলকে অজুহাত দিয়ে মোকাবেলা করার চেষ্টা করেন না, তারা শুভ পরিবর্তনে বিশ্বাসী। তারা নিজেদের ত্রুটি স্বীকার করে তা মোকাবেলার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহন করে নিজেদের সমৃদ্ধ করার চেষ্টা করে চলেন।

তারা আরামপ্রদতা খুঁজে বেড়ান না: প্রকৃত শিকারীরা যেমন জঙ্গলের হিংস্র জন্তুর ভয়ে শিকার করা বাদ দিয়ে ঘরে বসে থেকে আরামপ্রিয় জীবন যাপন করেন না, তেমনি একজন প্রকৃত আত্মবিশ্বাসী লোক কখনোই আরামপ্রিয় জীবনে বিভোর হয়ে সফল হওয়ার কঠিন চ্যালেঞ্জগুলোকে হাতছাড়া করেন না। প্রবাদ আছে- “কষ্ট না করলে কেষ্ট মেলে না”।

আর কষ্ট করার ভয় কখনোই প্রকৃত আত্মবিশ্বাসীদের লক্ষ্যে পৌঁছতে বাঁধা হয়ে দাঁড়াতে পারে না। তারা জানেন, সফলদের পথ যুগে যুগে সর্বদাই অমসৃণ ছিল। আর তাই সেই পথে এগিয়ে যাওয়ার জন্য অলসদের মতো আরামপ্রিয় জীবনে না থেকে তারা প্রতিকূল পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য নিজেকে প্রস্তুত করার চেষ্টায় ব্যস্ত থাকেন।

তারা কখনোই নিজেকে অযোগ্য মনে করেন না: বিল গেটস একবার বলেছিলেন- “তুমি যদি অভাবী হয়ে জন্মাও এটা তোমার দোষ নয়, কিন্তু তুমি যদি অভাবী হয়ে মারা যাও তাহলে এটা তোমার দোষ।” তেমনই পৃথিবীতে কোনো মানুষই অর্থ, দক্ষতা আর জ্ঞানে সমৃদ্ধ হয়ে জন্মগ্রহণ করে না। চেষ্টা আর মেধার দ্বারাই তা অর্জন করতে হয়। আর আত্মবিশ্বাসী লোকেরা সর্বদাই উপায় উদ্ভাবনে দক্ষ।

তারা কখনোই নেতিবাচক চিন্তাকে প্রশ্রয় দেন না। তারা বিশ্বাস করেন নিজেদের সক্ষমতার উপর। অর্থ, দক্ষতা কিংবা জ্ঞানের ঘাটতি থাকাকে ব্যর্থতা মনে করার বদলে নিজ যোগ্যতার উপর বিশ্বাস করে তারা তা অর্জনের চেষ্টা করে যান। আত্মবিশ্বাসী লোকেরা কখনই অতীতের কথা ভেবে নিজের ভবিষ্যত সম্ভাবনাকে নষ্ট করেন না। প্রতিনিয়তই নিজের সময়কে কাজে লাগিয়ে নতুন কিছু শেখার চেষ্টা করে যান।

তারা প্রতিকূলতাকে এড়িয়ে যান না: ইংরেজীতে একটা প্রবাদ আছে- “What hurts you today makes you stronger tomorrow”. অর্থাৎ, “আজ যেটা তোমাকে আঘাত দিচ্ছে কাল সেটাই তোমাকে সবল করে তুলবে”। আর এটা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করেন বলেই একজন আত্মবিশ্বাসী লোক কখনোই ভীত হয়ে কিংবা প্রতিকূল পরিস্থিতিতে হতাশ হয়ে নিজের লক্ষ্য থেকে বিচ্যুত হন না।

তারা আঘাতকে আলিঙ্গন করেন আহত হওয়ার জন্য নয়, আরো সবল হওয়ার জন্য। তারা প্রতিকূলতাকে ভয় না পেয়ে সেখান থেকে শিক্ষা নিয়ে ভবিষ্যৎ জীবন যুদ্ধের জন্য নিজেদের প্রস্তুত করে তোলেন। আর এইভাবেই একজন আত্মবিশ্বাসী লোক নিজের আত্মবিশ্বাসকে প্রতিনিয়ত করে তোলেন আরো মজবুত।

হার্বার্ট স্পেন্সার যেমন বলেছিলেন- “শিক্ষার আসল উদ্দেশ্য শুধু জ্ঞান আহরণ নয় বরং জীবনে তার প্রয়োগ”, তেমনি এসব বিষয় শুধুমাত্র পড়ার মধ্যেই সীমাবদ্ধ না রেখে নিজের জীবনে প্রয়োগ করার মাধ্যমেই একসময় মিলবে আমাদের কাঙ্ক্ষিত সফলতা!
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url