নতুন চাকুরীর ইন্টারভিউয়ে ১০ ভুল কখনো করবেন না


চাকরির সাক্ষাৎকার দিতে যাবেন। বড় উপলক্ষ—হ্যাঁ, উপলক্ষই তো! একটি সাক্ষাৎকারেই তো ঘুরে যেতে পারে আপনার জীবনের মোড়। সমৃদ্ধির পথে শুরু হতে পারে আপনার পথচলা। এত বড় যে উপলক্ষ, সেখানে তো অবশ্যই ভালো প্রস্তুতি নিয়ে যাওয়া উচিত। নিজেকে একটু অন্যভাবে উপস্থাপন করা, একটু উপস্থিত বুদ্ধির পরিচয় দেওয়া, কথাবার্তায় সতর্ক থাকা—এগুলো তো অবশ্যকরণীয়। অনেক আরাধ্য যে সাক্ষাৎকার, সেখানে যেকোনো অসতর্কতা কিন্তু সর্বনাশ ডেকে আনতে পারে চাকরিপ্রার্থীর জন্য। কিছু জিনিস আছে, যা চাকরির সাক্ষাৎকারে কখনোই করা উচিত নয়। কী সেগুলো, একবার চোখ বুলিয়ে প্রস্তুত হন সামনের কোনো সাক্ষাৎকারের জন্য…

১. অনাগ্রহ
আপনার আবেদন দেখেই কিন্তু প্রতিষ্ঠান আপনাকে সাক্ষাৎকার দিতে ডেকেছে। আপনাকে নেওয়াই তাদের উদ্দেশ্য। কিন্তু সেখানে সাক্ষাৎকার যাঁরা নিচ্ছেন, তাঁদের সামনে যদি আপনার অনাগ্রহ প্রকাশিত হয়ে পড়ে, তাহলেই কিন্তু সর্বনাশ! এটা ঠিক, চাকরিপ্রার্থীরও চাকরি নিয়ে পছন্দ-অপছন্দ থাকতে পারে। এমন হতে পারে, আপনি হয়তো পছন্দের চাকরির সাক্ষাৎকারের আগেই একটু কম পছন্দের চাকরির সাক্ষাৎকার দিতে এসেছেন, কিন্তু তারপরও অনাগ্রহ দেখাবেন না।

২. অপরিপাটি বেশভূষা
আগেই বলা হয়েছে, চাকরির সাক্ষাৎকার মানুষের জীবনের বড় উপলক্ষ। সে কারণে এতে নিজের সবচেয়ে সেরা পোশাকটাই পরে যাওয়া উচিত। কথায় আছে, আগে দর্শনদারি তারপর গুণবিচারী। সাক্ষাৎকার কক্ষে আপনাকে দেখে যদি পছন্দই না হয়, তাহলে কর্তৃপক্ষ কেন আপনার ভেতরের অভিজ্ঞতা ও জ্ঞানের খোঁজ নিতে চাইবে? চাকরির সাক্ষাৎকারে বেশভূষা তাই ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ।

৩. দেরি করে যাওয়া
চাকরির সাক্ষাৎকারে দেরিতে আসা ভয়াবহ ভুল। এখানে কোনো অজুহাতের সুযোগ নেই। কারণ কর্মীর সময়ানুবর্তিতা প্রতিষ্ঠানের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। দেরি করে সাক্ষাৎকার দিতে যাওয়াটাই একটা বড় ত্রুটি, সেখানে অজুহাত দেখানো আরও বড় ভুল। দেরি করে গেলে আপনার চাকরি পাওয়ার সম্ভাবনা অনেকটাই কমে যেতে বাধ্য।

৪. প্রস্তুতি ছাড়াই সাক্ষাৎকারে যাওয়া
আপনাকে দু-একটি প্রশ্ন করেই প্রশ্নকর্তারা বুঝে যাবেন আপনার প্রস্তুতি কেমন। তখন তাঁরা আপনার প্রতি আগ্রহই হারিয়ে ফেলবেন। সে কারণে প্রস্তুতিটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। অনেকেই বলতে পারেন, প্রশ্ন তো যেকোনো বিষয় নিয়েই হতে পারে—প্রস্তুতিটা কী নেব! অন্তত নিজের বিষয়টি সম্পর্কে বা যে পদে সাক্ষাৎকার দিচ্ছেন, সেটি সম্পর্কে একটু পড়াশোনা করে যাওয়াই যায়।

৫. অপ্রাসঙ্গিক কথা বলা
‘আপনি আমাদের সম্পর্কে কতটুকু জানেন’ অথবা ‘আপনি এখানে কেন চাকরি করতে চান’—সাক্ষাৎকার পর্বে এই দুটি প্রশ্নের মুখোমুখি চাকরিপ্রার্থী হতেই পারেন। এসব প্রশ্নের জবাবে কখনোই অপ্রাসঙ্গিক কোনো কথা কিংবা অহেতুক প্রশংসা করবেন না। এ ধরনের কোনো কিছু বললে সেটা উল্টো আপনার যোগ্যতা কমিয়ে দেবে। যথাসম্ভব বুদ্ধিমত্তা এবং আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে প্রাসঙ্গিক কথা বলার চেষ্টা করুন।

৬. ফোনের রিং বেজে ওঠা
সাক্ষাৎকার দেওয়ার আগে নিজের মোবাইল ফোনটি বন্ধ রাখা উচিত। সাক্ষাৎকার দেওয়ার সময় পকেটে ফোন বেজে ওঠাটা অশোভন ব্যাপার। এতে আপনার চরিত্রের নিস্পৃহ ভাবই ফুটে ওঠে। বোঝা যায়, কাজের প্রতি আপনার আগ্রহ কম। সাক্ষাৎকার যাঁরা নিচ্ছেন, তাঁরা অনুমান করে নেন, চাকরি দিলেও আপনি ঠিক একই কাজ করবেন।

৭. আগের চাকরির বদনাম
নতুন চাকরির সাক্ষাৎকার দিতে এসে আগের প্রতিষ্ঠান নিয়ে বাজে কথা বলা খুব অন্যায়। এটা একধরনের চারিত্রিক দোষ। আগের চাকরিটা নিয়ে আপনার মনে যদি কোনো ক্ষোভ থেকেও থাকে, নতুন চাকরির সাক্ষাৎকারের সময় তা চেপে রাখাই ভালো। সাক্ষাৎকার যাঁরা নেন, তাঁরা এই একটি ব্যাপার থেকেই আপনার সম্পর্কে ধারণা পেয়ে যাবেন। সে ক্ষেত্রে চাকরি পাওয়ার সম্ভাবনা কমে যাবে অনেকটাই।

৮. বেতন জিজ্ঞাসা করা
সাক্ষাৎকার দিতে গিয়েই বেতনের প্রসঙ্গ তুলে বসবেন না যেন। এটি বেশ অশোভন। সাক্ষাৎকার গ্রহণকারীরা যদি বেতনের প্রসঙ্গ তোলেন, তাহলে আগ বাড়িয়ে নিজের চাহিদার কথা বলতে যাবেন না। প্রতিষ্ঠানের বেতনকাঠামো সম্পর্কে একটু পড়াশোনা করেই সাক্ষাৎকার দিতে যাওয়া ভালো। তবে নিজের চাহিদা সাক্ষাৎকারের সময় না জানানোই ভালো। ছেড়ে আসা প্রতিষ্ঠানের বেতন নিয়ে ভুল তথ্য দেওয়াও খুব বড় অপরাধ। সব সময় মনে রাখবেন, প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের কাছেই অন্য প্রতিষ্ঠানের বেতনকাঠামোর প্রয়োজনীয় তথ্যাদি থাকে।

৯. প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে না জানা
যে প্রতিষ্ঠানে সাক্ষাৎকার দিতে এসেছেন, সে প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সাক্ষাৎকার দিতে এসে যদি সেই প্রতিষ্ঠানের মৌলিক বিষয়গুলোই বলতে না পারেন, তাহলে সেটা বিপর্যয়কর। চাকরিদাতা আপনাকে চাকরি দেওয়ার উৎসাহই হারিয়ে ফেলবেন। তাই সাক্ষাৎকার দিতে যাওয়ার আগে সেই প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে একটু ধারণা নিয়ে যাওয়া উচিত।

১০. নেতিবাচক শরীরী ভাষা
‘চাকরি হলে আপনাকে প্রতিদিন অফিসের সময়ের বাইরেও থাকতে হতে পারে’—এমন কথা যদি আপনার পছন্দ না-ও হয়, তারপরও শরীরী ভাষায় নেতিবাচকতা ফুটিয়ে তুলবেন না। হাসিমুখে বলবেন, ‘সেটা আমি জানি’ বা ‘আমার কোনো অসুবিধা নেই’। ছুটির পরেও অফিসে থাকতে হতে পারে বলা মানে এই নয় যে আপনাকে প্রতিদিন থাকতে হবে। কিন্তু সাক্ষাৎকার দেওয়ার সময়ই যদি আপনি মুখ কালো করে ফেলেন, তাহলে সেটি আপনার চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রে নেতিবাচক প্রভাব রাখতে বাধ্য।
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url