সফলতা পাওয়ার জন্য কি করবেন? মোটিভেশন


মানুষের এখন অনেক পরিবর্তন এসেছে। তবে পরস্পরের মধ্যে চিন্তা-চেতনার ঐক্য খুব কমই দেখা যায়। যেমন ধরুন, আমরা সবাই কিন্তু সপ্তাহের সাত দিন ২৪ ঘণ্টা মুঠোফোনের মধ্যে ডুবে থাকি না। নানা পরিসংখ্যান বলে, কিশোর আর তরুণদের মধ্যে প্রতি পাঁচজনের মধ্যে মাত্র একজন এই যন্ত্র-বন্ধুটিকে ছাড়া রাতে ঘুমাতে পারে না। আমরা সবাই ধনী নই, কিন্তু পৃথিবীর ইতিহাসে বর্তমান সময়ে আমরা সবচেয়ে ধনী প্রজন্মের সদস্য। চিন্তা করে দেখুন, আগের সময়ের পৃথিবীর মানুষের চেয়ে আমরা কত বেশি সুযোগ-সুবিধা লাভ করছি।

আমাদের ইন্টারনেট আছে, আছে আইফোন। বিশ্বের অনেক কিছু এখন বদলে গেলেও, কিছু কিছু জিনিস এখনো আগের মতোই আছে। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আপনারা যে মানসিক দক্ষতা, গাণিতিক যুক্তি, সমস্যা সমাধানের কৌশল, যোগাযোগ দক্ষতা, টিমওয়ার্ক নিয়ে বাস্তব জ্ঞানার্জন করেছন; তা কিন্তু অসাধারণ। ৩০ বছর আগে এগুলো ছিল তাত্ত্বিক বা থিওরিটিক্যাল যা সফলতার সূত্র।

এখনো মানুষকে সফল হতে হলে এসব বাস্তব দক্ষতা প্রয়োজন। কিন্তু আমার চেয়েও এসব তত্ত্বকথা আপনারা বেশি ভালো করে জানেন, বোঝেন। কারণ আগে এসব তাত্ত্বিক গুণ সফলতার পথ নির্মাণ করতো। আর এখন মানুষ এসব বাস্তব জ্ঞান ও দক্ষতা নিয়ে ক্যারিয়ার শুরু করে। ইন্টারনেটের কারণে আপনারা আগে থেকেই সব জানতে পারেন। কিন্তু তারপরও সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বাস্তব কাজের জ্ঞান ও দক্ষতা মানুষকে অভিজ্ঞ করে তোলে। নিজেকে অন্যের চেয়ে দক্ষ করে তুলতে একাগ্রতার বিকল্প নেই। আমরা সমাবর্তনের পর থেকে জীবনে অনেক কিছু অর্জন করেছি। আমাদের শিক্ষা ও কর্মজীবনের অভিজ্ঞার আলোকে সফলতার কিছু নীতিগত কথা আপনাদের উদ্দেশ্যে পেশ করছি-

এক. কঠোর পরিশ্রম সৌভাগ্যের প্রসূতি। সৌভাগ্য নিয়েই পৃথিবীতে কোনো মানুষের জন্ম হয় না। কর্মের মাধ্যমে তার ভাগ্য গড়ে নিতে হয়। পরিশ্রমই সৌভাগ্য বয়ে আনে। উদ্যম, চেষ্টা ও শ্রমের সমষ্টিই সৌভাগ্যের চাবিকাঠি। কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে কঠিন কাজও সহজ হয়। জীবনে উন্নতি করতে হলে পরিশ্রমের কোনো বিকল্প নেই। পরিশ্রম ছাড়া কেউ কখনো তার ভাগ্যকে গড়ে তুলতে পারেনি। যে জাতি যত বেশি পরিশ্রমী, সে জাতি তত বেশি উন্নত। যে কাজ একবার শুরু করছেন, তা নিয়ে দ্বিধান্বিত হবেন না।

সফল হওয়ার অদম্য ইচ্ছা আর পরিশ্রম দিয়ে সেই কাজ করে যান। আমার অভিজ্ঞতায় বলতে পারি, শিক্ষালয়, কর্মস্থল, পেশাজীবন ও খেলাধুলাসহ জীবনের সর্বত্রই অনেক প্রতিভাবান লোকের দেখা মেলে। কিন্তু মনে রাখবেন, শুধু প্রতিভা দিয়েই সফলতা অর্জন হয় না। সফলতার জন্য প্রতিভার সাথে প্রয়োজন ধৈর্য, প্রচণ্ড ইচ্ছাশক্তি ও পরিশ্রম। একাগ্রচিত্তে পরিশ্রম করে যান সফলতা একদিন আপনার দরজায় কড়া নাড়বে। যদি আপনি কোনো প্রতিষ্ঠানের নির্বাহী হন, তাহলে আপনার ন্যায়নিষ্ঠা, একাগ্রতা ও নিপুণতা আপনার দলের অন্যদের উৎসাহ-উদ্দীপনা ও প্রেরণা জোগাবে। বড় কিছু অর্জনের জন্য যতটা সম্ভব কঠোর পরিশ্রম করে যান।

দুই. নিজের কাজ বুঝে নিন। আপনাকে কী কী কাজ করতে হবে, কীভাবে করতে হবে, তা প্রথমে জেনে নিন, বুঝে নিন। তাহলে সহজে তা সম্পন্ন করতে পারবেন। সব পেশার ক্ষেত্রেই কাজকর্মে দেখতে সুন্দর, গোছানো ও পরিপাটি হওয়াটা একটা বাড়তি গুণ হিসেবে বিবেচিত হয়।

তিন. নিজ দায়িত্বের ব্যাপারে পরিপূর্ণ সচেতন হোন। যে কাজটি করবেন, তা সম্পর্কে আপনার স্বচ্ছ ধারণা থাকতে হবে। ভাসা ভাসা ধারণা নিয়ে কাজ করলে সফল হওয়া যায় না। মহান আল্লাহ তায়ালার ঘোষণা ‘হে নবী! আপনি বলে দিন, যারা জানে আর যারা জানে না তারা কি সমান হতে পারে?’ না, কোনো ক্ষেত্রেই সমান হতে পারে না। তাই আপনাকে সাধারণ জ্ঞান ও মৌলিক আদর্শের জ্ঞানসহ পেশার জ্ঞান সম্পর্কে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন বা উত্তমদের কাতারে শামিল হতে হবে। আপনি যে পেশারই হোন না কেন, আপনাকে সেই পেশা সম্পর্কে সম্যক ধারণা থাকতে হবে। পেশাগত জ্ঞানকে সর্বোচ্চ কাজে লাগানোর জন্য এর যাবতীয় খুঁটিনাটি বিষয় আপনাকে আয়ত্ত করতে হবে। তাহলে আপনার পথচলা সুদৃঢ় ও পদস্খলনমুক্ত হবে। জ্ঞানের ব্যাপ্তি ও গভীরতা থাকা আপনার জন্য একান্ত আবশ্যক।

চার. আপনাকে সবসময় কাজ করার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। কাজের রুটিন তৈরি করতে হবে। আপনি কোনো কাজ, কখন, কীভাবে করবেন তার জন্য অগ্রাধিকারের তালিকা তৈরি করে নিন। কোলাবোরেশন, নেটওয়ার্কিং এবং যোগাযোগ নতুন চিন্তা, নতুন কর্মপন্থা, নতুন নতুন সুযোগ তৈরি করে। তবে নেটওয়ার্কটি অবশ্যই সৎ ও উদ্দেশ্য বহুল হওয়া বাঞ্ছনীয়।

পাঁচ. যতটা পারেন বেশি করে নিজেকে গুছিয়ে নিন। এতে আপনার কর্মপরিবেশ সুন্দর হবে, কর্মস্পৃহা বাড়বে। বছরের শুরুতেই একটি বা দুটি ক্ষেত্র বেছে নিন যেগুলোর প্রতি সারা বছর আপনাকে বিশেষ মনোযোগ দিতে হবে।

ছয়. শুরু থেকেই সক্রিয় থাকুন। যে কোনো পেশায় কাক্সিক্ষত উন্নতির জন্য প্রয়োজন সঠিক পরিকল্পনা এবং পর্যায়ক্রমে তা বাস্তবায়ন। এজন্য আপনাকে বছরের শুরু থেকেই হতে হবে সজাগ ও সক্রিয়। আমাদের প্রাত্যহিক জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ পেশাজীবন। তাই প্রতিদিনই আপনার কর্মস্থল নিয়ে ভাবুন, নিজের নেতিবাচক অভ্যাসগুলো কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করুন, নিজেকে প্রস্তুত করুন, পেশাগত নেটওয়ার্ক শক্তিশালী করুন।

সাত. সঠিকভাবে ও সঠিক সময়ে কাজ সম্পন্ন করুন। সফলতার পূর্বশর্ত হচ্ছে উপযুক্ত সময়ে উপযুক্ত কাজটি করা। আপনার করণীয় কাজগুলোকে গুরুত্বের ক্রমানুসারে সাজান। প্রতিদিন সকালে কাজের একটা তালিকা করে ফেলবেন, তারপর গুরুত্বের ক্রমানুসারে সম্পন্ন করুন। প্রতিটা কাজ করতে কতক্ষণ সময় লাগতে পারে সেই অনুযায়ী একটি চার্ট তৈরি করুন। নির্দিষ্ট সময়সীমা বেঁধে কাজ করতে শিখুন এবং সুন্দর করে সম্পন্ন করুন।

কারণ আপনার কাজের যদি কোনো টাইম লাইন বা সময়সীমা নির্ধারিত না থাকে তাহলে কখনো আপনি এটা যথাসময়ে সম্পন্ন করতে পারবেন না। ক্রমানুসারে কাজ শেষ করুন। দেখবেন আপনার সকল কাজ যথাসময়েই সঠিকভাবে শেষ হয়ে গেছে। সফলতার জন্য দক্ষতার উন্নয়ন প্রয়োজন। কিন্তু দক্ষতার বিষয়টি অনেক ব্যাপক এবং একটি দক্ষতাই আরেকটি দক্ষতার ওপর নির্ভরশীল। আপনি শুধু একটি বা দুটি বিষয়ে দক্ষতা অর্জন করলে সফলতা লাভ করবেন, এটি মনে করার কোনো কারণ নেই। সফলতা লাভের জন্য যত বেশি দক্ষতা অর্জন করা যায়, ততই ভালো। আর এজন্য প্রয়োজন বেশি বেশি কাজ করা।

আট. আপনাকে যথাসময়ে কর্মস্থলে উপস্থিত হতে হবে। সব অফিসে হয়তো নিজস্ব পরিবহন ব্যবস্থার সুযোগ নেই। এক্ষেত্রে আপনাকে হাতে কিছুটা সময় নিয়েই বাসা থেকে বেরোতে হবে। নিজের গাড়ি থাকলেও আপনাকে রাস্তায় যানজটের কথা অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে। অফিসে নির্দিষ্ট সময়ের পর পৌঁছে যানজটের অজুহাত কয়দিন খাটে বলুন।

প্রায়ই দেরি হতে থাকলে অফিসে তা আপনার ভাবমূর্তিকে নষ্ট করে দেবে এবং এটি অফিসে আপনার ইমেজ ম্লান করে দেয়। সব কাজে ও মিটিংয়ে সময়মতো উপস্থিত থাকুন। হাতের জরুরি কাজ শেষ করেই তবে অফিস ত্যাগ করা উচিত, অর্ধসমাপ্ত কিংবা অসমাপ্ত অবস্থায় কাজ রেখে যাওয়া উচিত নয়। নির্দিষ্ট সময়ের আগে অফিস থেকে বেরিয়ে যাওয়াটাও পেশাদারিত্বের পর্যায়ে পড়ে না। তবে জরুরি কোনো প্রয়োজনে নির্ধারিত সময়ের আগে অফিস ত্যাগ করতে হলে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি নেয়া উচিত।

নয়. নিজের দায়িত্ব পালনে মনোযোগী হোন। কর্মজীবনে সফলতার মূলমন্ত্র হচ্ছে নিজের কাজকে সফলভাবে শেষ করতে পারা। প্রতিষ্ঠান একজন কর্মীর কাছে থেকে সবসময় প্রত্যাশিত কাজ চায়। সেক্ষেত্রে নিজের কাজ ও দায়িত্ব ঠিকভাবে পালন করতে হবে। সময়ের কাজ সময়ে সম্পন্ন করতে হবে। অন্যের কাজে ব্যাঘাত ঘটানো যাবে না। প্রতিষ্ঠানের স্বার্থবিরোধী কাজ থেকে দূরে থাকতে হবে। কাজ করতে গিয়ে কোনো সমস্যা হলে তা নিজের মধ্যে পুষে না রেখে উপযুক্ত কারও সঙ্গে কথা বলতে হবে। কাজের মধ্যে গতি আনতে পারলে আপনার সুনাম ছড়িয়ে পড়বে।

দশ. সৃজনশীলতা আপনার জন্য একটি অন্যতম মৌলিক গুণ। আপনাকে হতে হবে পরিপক্ব, প্রতিষ্ঠানকে বেগবান করতে হলে নিত্যনতুন পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হয়। প্রতিষ্ঠানের সুবিধা-অসুবিধায় অভ্যন্তরীণ ও বহিরাগত ষড়যন্ত্রের মোকাবিলায় রাষ্ট্রের নানা আইন-কানুনের কারণে আপনাকে নতুন ধরনের নানা কর্মসূচি ও কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করতে হয়। অনেক সময় কর্মপদ্ধতি পরিবর্তন করতে হয়। তড়িৎ গতিতে অনাকাক্সিক্ষত ও অপ্রত্যাশীত অবস্থায় উপস্থিত অনেক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হয়। কাজেই আপনি যদি সৃজনশীল মানসিকতার না হন, তাহলে প্রতিষ্ঠান চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

এগারো. সফলতার জন্য সততা একটি বড় গুণ। অসৎ হয়েও লাভ নেই। অসৎ পথে আপনি বিপুল সম্পদ অর্জন করলেও তা কিন্তু আপনি আপনার জীবদ্দশায় ভোগ করে যেতে পারছেন না। আপনার মৃত্যুর পর আপনার অর্জিত সম্পদ ভোগ করবে আপনার উত্তরসূরিরা। তারা কিন্তু আপনার পাপের দায়ভার নেবে না। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদিন কোনো এক বৈঠকে উপস্থিত সাহাবীদের জিজ্ঞেস করেছেন, ‘তোমাদের মধ্যে এমন কেউ কি আছো, যারা পরের সম্পদের জন্য পরিশ্রম করো?’ উত্তরে উপস্থিত সাহাবী রাদিয়াল্লাহু আনহুগণ বলেন, ‘আমরা সবাই নিজের জন্য পরিশ্রম করি।’

তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘যে খাবারটি তুমি খেয়ে হজম করো, যে কাপড় তুমি পরিধান করে ছিঁড়ে ফেলো, আর যে সম্পদ তোমার জীবদ্দশায় (ইসলামের বিধান অনুযায়ী) ব্যয় করো এটুকুই তোমার নিজের সম্পদ।’ নিজের কাছে সততা সবচেয়ে বড় আত্মবিশ্বাস। সৎ মানুষকে সবাই বিশ্বাস ও সম্মান করে। আপনাকে সত্যবাদী হতে হবে এবং ওয়াদা করলে সেটা যে কোনো মূল্যে রাখার চেষ্টা করতে হবে। আপনার গ্রাহকদের জন্য, পিতা-মাতার জন্য, কর্মীদের জন্য, পরিবারের জন্য, বন্ধুদের জন্য এবং নিজের জন্য, যেটা ঠিক সেটাই করবেন সততার সঙ্গে।

বারো. বন্ধু তৈরি করুন। মনে রাখবেন, সফলতা কখনো একা আসে না। কিন্তু কখনোই একা একা আপনি বড় কিছুই করতে পারবেন না। সাফল্য দলগত পরিশ্রমের সমষ্টিগত ফল। আপনারা আগামীর দলনেতা। নেতৃত্বের জন্য আপনাদের অন্য মানুষের কাছ থেকে সম্মান ও বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জন করতে হবে। নিজের কথা বলার চেয়ে অন্যদের কথা শোনার অনন্য যোগ্যতা আপনার অর্জন করতে হবে। মানুষ তখনই আপনার প্রতি সহানুভূতি দেখাবে, যখন আপনি তাদের প্রতি সহানুভূতিশীল হবেন। জীবনের নানা প্রয়োজনীয় কাজের সাথে ধীরে ধীরে আপনাকে অনেক মানুষের সঙ্গে মিশতে হবে, বাড়াতে হবে বন্ধুর সংখ্যা।

তেরো. অন্যের জন্য কিছু করুন। আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞান আর উদ্ভাবনী প্রযুক্তির এই সময়ে আমাদের সামনে আছে অনেক সুযোগ। এ সুযোগকে আমাদের কাজে লাগিয়ে বড় কিছু করা সম্ভব। কিন্তু সবকিছুর আগে একটা কাজ করতে কখনোই ভুলবেন না। নিজের মেধা দিয়ে অন্যের জন্য ভালো কিছু করবেন সবসময়। নিজের কাজের ক্ষতি না করে একে অপরকে সহযোগিতা করুন, তাহলে আরো বেশি সফল হতে পারবেন। পারস্পরিক সহযোগিতার মধ্যে কাজ করলে ভালো ফল পাওয়া যায়। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমাদের মাঝে সেই উত্তম যে মানুষের উপকার করে। তিনি আরো বলেছেন, পৃথিবীবাসীর প্রতি সদয় হও, তবে আসমানের অধিবাসীরা তোমাদের প্রতি সদয় হবে।

চৌদ্দ. কাজকে বোঝা মনে না করে সহজভাবে গ্রহণ করুন। কাজের খুব চাপ হলে সব ভুলে গিয়ে ৫ মিনিট চুপচাপ বসে থাকুন, একটু হাঁটাহাঁটি করুন। কাজের চাপ কমানো একদিনের অনুশীলন নয়। অনুশীলন করতে থাকুন কাজের চাপ কমে যাবে।

পনেরো. যে কোনো বাধা-বিঘ্নকে মোকাবিলার সৎ সাহস থাকতে হবে। বাড়ি কিংবা অফিসে যেখানেই আপনি কোনো সমস্যা দেখবেন তার মুখোমুখি হবেন। আপনার মেধা ও যোগ্যতা দিয়ে চিহ্নিত সমস্যাগুলোর মোকাবিলা করুন। সমস্যাকে যতই এড়িয়ে চলবেন, সমস্যা ততই বড় হয়ে দেখা দেবে।

ষোলো. আত্মবিশ্বাস ছাড়া কোনো কাজেই সফলতার আশা করা যায় না। বলা হয়, আত্মবিশ্বাসের সাথে শুরু করার মানেই হলো অর্ধেক কাজ করে ফেলা (ডবষষ নবমরহরহম রং যধষভ ফড়হব)। আত্মবিশ্বাস মানে নিজকে চেনা, নিজের সৃজনশীলতার ওপর আস্থা রাখা, হীনম্মন্যতা দূর করা, দৈনন্দিন ও প্রাত্যহিক জীবনে আত্মবিশ্বাস ও দৃঢ়তার সাথে কাজ করা। আপনার বন্ধু, পরিবার এবং নিজের ওপর বিশ্বাস রাখুন। নিজের বন্ধু আর পরিবারকে সবসময় কাছে রাখবেন। পরিবার আর বন্ধু কতখানি গুরুত্বপূর্ণ সেটা বলে বোঝানোর অপেক্ষা রাখে না। তারাই আপনার পথ চলাকে পরিপূর্ণ করে তুলতে পারে। ভালো সময়গুলো তাদের সঙ্গে উদযাাপন করুন। আর কঠিন সময়গুলোতে পরিবার আর বন্ধুদের পরামর্শ নিন। নিজের বিশ্বাসের ওপর আস্থা রাখুন।

সতেরো. নতুন প্রতিষ্ঠান দাঁড় করানো কোনো সহজ কাজ নয়। যে কোনো উদ্যোক্তাই কঠিন সময়েও কাজ করে যাওয়ার প্রবল মানসিকতা নিয়ে এগিয়ে যায় এবং মাঝে মাঝে সে বড় কিছু করে ফেলে। যারা সিরিয়াস তারা যে কোনো কিছু করতে প্রস্তুত থাকে যাই হোক না কেন। একটি বিষয়ে তারা ধাপে ধাপে এগিয়ে যায়, তারা কখনও একসাথে সবকিছু করতে গিয়ে ঝামেলা তৈরি করে না। আপনাকে প্রতিষ্ঠানের প্রতি ও কাজের প্রতি আন্তরিক হতে হবে। আন্তরিকতার সাথে প্রতিষ্ঠানের কার্য পরিচালনা করলে কাজের অগ্রগতি হয়। ফলে প্রতিষ্ঠান লাভবান হয়। তাই আপনাকে আন্তরিক হওয়া প্রয়োজন।

আঠার. অনেকেই একা একা কাজ করতে এবং সমস্যার সমাধান করতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন। কিন্তু পরিবর্তনশীল বিশ্বের আধুনিক অফিস পরিচালনা ব্যবস্থায় টিম ওয়ার্কের মাধ্যমে কাজ সম্পাদনের সাফল্যকে সর্বাগ্রে মূল্যায়িত করা হয়েছে। ফলে নিজেকে টিম ওয়ার্কের মাধ্যমে কাজ করার উপযোগী রূপে গড়ে তুলুন।

উনিশ. আপনি কম্পিউটার ও ইন্টারনেট ব্যবহার না জানলে তা শিখে নিন। কারণ বর্তমান জগত কম্পিউটারের জগৎ। তাই আপনাকে কম্পিউটার ও ইন্টারনেট ব্যবহার অবশ্যই জানতে হবে। বর্তমান সময় আপনি যদি কম্পিউটার না জানেন, তাহলে আপনাকে শিক্ষিত বলা যাবে না। শুনতে খারাপ লাগলেও এটাই সত্যি। আবার তার মানে আপনি কম্পিউটারে উচ্চশিক্ষিত হবেন, তা নয়।

আইটি দক্ষতা বলতে বোঝায় কম্পিউটার ব্যবহার করে চিঠি বা কোনো ডকুমেন্ট লিখতে, সুন্দরভাবে প্রিন্ট করা জানতে হবে। জানতে হবে কীভাবে কম্পিউটার ব্যবহার করে আপনি ডাটা ম্যানেজমেন্ট করতে পারেন। কম্পিউটার ব্যবহার করে কীভাবে একটি প্রেজেন্টেশন করতে পারেন। এছাড়া ইন্টারনেট ব্যবহারও ভালোভাবে জানতে হবে। এর পাশাপাশি যদি কম্পিউটার এর হার্ডওয়্যার ও মেনটেইন্যান্স জানা থাকে, তবে আপনি আইটি দক্ষতার প্রধান ধাপগুলো পূর্ণ করবেন।

বিশ. সবশেষে ভুল থেকে শিক্ষা নেয়া। আমরা যদি আমাদের দৈনন্দিন কাজকর্মগুলোর দিকে তাকাই, তাহলে দেখতে পাবো আমরা একই ভুল বারবার করতে থাকি। একই ভুল বারবার করলে আপনি ভালো কিছু পাওয়ার আশা করতে পারেন না। নিজের ভুল শুধরানোর জন্য সহজ এই পদ্ধতিটি প্রয়োগ করে দেখতে পারেন প্রতিদিন কী ভুল করছেন, তা এক জায়গায় লিখে রাখুন। তারপর গত সাত দিনে কী কী ভুল করেছেন সেগুলো পড়–ন। আপনি লক্ষ্য করবেন, একই ভুল আপনি সপ্তাহে একাধিকবার রিপিট করেছেন।

হাইফ্রিকোয়েন্সি ভুলগুলো থেকে নিজেকে শুধরানো শুরু করুন, দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হোন যে ভুলগুলো রিপিট করবেন না। ভুল থেকে শিক্ষাগ্রহণ করা ইসলামী জীবনব্যবস্থার অন্যতম স্তম্ভ। ইসলামী পরিভাষায় একে বলে তাওবা (ফিরে আসা)। জীবনে সফলতার অন্যতম চাবিকাঠি হলো তাওবা। কারণ তাওবাকারী তার তাওবার মাধ্যমে প্রমাণ করে যে সে নিজের পরিবর্তন চায়, উন্নতি চায়। তাওবা পানি ঢেলে দেয় অহঙ্কার আর গোঁয়ার্তুমির আগুনে।

আপনারা পৃথিবীর ইতিহাসে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে উদ্ভাবনী এবং প্রত্যাশায় পরিপূর্ণ একটি প্রজন্ম। আপনাদের হাতের মুঠোয় এখন সমাজ বদলের নানা অনুষঙ্গ। আপনাদের সামান্য চিন্তায় এখন বদলে যায় সমাজ। সামনে যে সুযোগ আসবে, সেটাই খপ করে ধরে ফেলুন। ক্যারিয়ারের শুরুতে যা করার সুযোগ পাবেন, তা-ই করুন।

সব নতুন অভিজ্ঞতা আপনার দক্ষতাকে বিকশিত করবে, দৃষ্টিভঙ্গিকে বদলে দেবে। যে কোনো কাজকে ভালোবাসুন। কাজকে উপভোগ করুন। অভিজ্ঞতাই আপনার সাফল্যের গতি নির্ধারণ করে দেবে। জীবনের লক্ষ্য নির্ধারণে মনোযোগী হোন। কঠোর পরিশ্রম করুন আপনি অবশ্যই সফল হবেন। সফলতার জন্য চাই ইচ্ছাশক্তি, একাগ্রতা ও কঠোর পরিশ্রম।
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url