মনে রাখুন ! অফিস আর বাসা এক করে ফেলবেন না


মুক্তা রাহমান। একটি করপোরেট অফিসে কর্মরত। সকাল থেকে সন্ধ্যা অবধি ব্যস্ত থাকেন অফিসের কাজে। আবার সপ্তাহের ছুটির দিনেও দেখা যায় ঘরের কাজের সব কিছু সামাল দিয়ে অফিসের কাজ নিয়ে বসছেন। বাসায় বসেই অফিসের চাপ সামাল দিতে হচ্ছে তাঁকে। এই সময়টুকুতে তিনি তাঁর বাচ্চাদের বই পড়তে দেন। না হলে টিভি দেখতে। কিন্তু সন্তানরা সব সময় মায়ের সান্নিধ্যই চায়।

সন্তানকে সময় দিতে পারছেন না। আবার অফিসের কাজ শেষ না হলে কাজের জায়গাটায়ও হয় সমস্যা। দিশাহারার মতো প্রতিটি সময় পার করতে হয় তাঁকে। শুধু সামিরা আঞ্জুম নন, আমাদের দেশে এমন নারী অনেকেই আছেন, অফিসের কাজ যাঁকে বাসায় বয়ে আনতেই হয়।

এতে করে সংসারের সব সামলে তিনি যেমন কাজে সম্পূর্ণ মন দিতে পারেন না, আবার তেমনি পরিবারও বঞ্চিত হয় তাঁর পারিবারিক সময় থেকে। নারীদের একটি বিরাট অংশ বর্তমান সময়ে ঘর ছেড়ে বাইরে কাজে যাচ্ছেন। নারীরা তাঁদের সময়ের কিছু অংশ বাইরের কাজে আর বাকি কিছু অংশ ঘরের কাজে ভাগ করে নেন।

তবে বেশির ভাগ নারী এই সময় ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে জটিলতায় ভোগেন। তাঁর জন্য ঘর আর কাজ সামলানো বেশ কঠিন হয়ে পড়ে। কিছু পরামর্শ মেনে চললে খুব সহজে নারীরা ঘর আর কাজ সামলানোর এই চ্যালেঞ্জটা গ্রহণ করতে পারেন। একটু নিয়ম মেনে চললেই তখন অফিসের কাজের বোঝা বাসায় বহন করতে হবে না।

অফিস-বাসা রুটিনমতো: যখন আপনি বাসায় থাকেন, তখন আপনার ভাবনা থাকবে শুধু নিজের ঘরের কাজ নিয়ে। সাপ্তাহিক পরিকল্পনামাফিক ঘর ঘোছানো। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, রান্নাবান্না, সন্তানদের স্কুলের টিফিন গুছিয়ে রাখা, সব পরিকল্পনামতো সময় ধরে করতে হবে। ঠিক তেমনি আপনি অফিসের কাজটুকু কিভাবে করবেন তা পরিকল্পনা অনুযায়ী করবেন। অফিসে প্রবেশের পর দিনের যে কাজগুলো আছে তা আগে টু-ডু লিস্টে গুরুত্ব অনুযায়ী সাজিয়ে নেবেন। এরপর একে একে সময় ধরে যদি আপনি আপনার কাজগুলো এগিয়ে রাখেন, দেখবেন দিনের কাজ শেষ হয়ে যাবে দিনেই।

নিজ কাজের সফলতা আলোচনা করুন: আপনার পরিবার আর কাজ সামলানোর অন্যতম উপায় হলো কর্মস্থলে আপনার প্রাপ্তিগুলো নিয়ে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে আলোচনা করুন। এটি আপনার আর আপনার কাজ সম্পর্কে পরিবারের মানুষের কাছে ভালো ভাবমূর্তি তৈরিতে ভূমিকা রাখবে।

কাজের জন্য জীবন: নিজেকে কাজে এত বেশি বিলিয়ে দেবেন না, যাতে করে কাজই আপনার জীবন পরিচালিত করে। কাজের পাশাপাশি পরিবারের সঙ্গে সময় কাটান, ঘরের ছোটখাটো কাজে হাত লাগান, ঘরের মানুষগুলোর খোঁজ রাখুন। তবেই আপনি আপনার কাজের মূল্যায়ন পাবেন।

নমনীয়তা বজায় থাকুক: ঘর আর কাজ একসঙ্গে সামলে চলা সহজ কোনো কাজ নয়। হয়তো এমন সময় আসবে, বাইরের কাজের চাপ আপনার পারিবারিক জীবন প্রভাবিত করছে। এসব ক্ষেত্রে নিজের নমনীয়তা বজায় রেখে চলুন। যখন অফিসের কাজ আপনাকে ঘরে বয়ে আনতে হয়, তখন পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সেটা নিয়ে কথা বলুন। তাদের নমনীয়ভাবে বুঝিয়ে বলুন আপনার এই জরুরি কাজের কথা। পরিবারের নমনীয়তা আপনার কাজকে সহজ করে দেবে।

সপ্তাহের একটি দিন পরিকল্পনার: সপ্তাহের একটি দিন একটু স্থির হয়ে ভাবুন আপনার পেশাদারি জীবন বা আপনার ব্যক্তিগত জীবনে কোন জিনিসগুলো অনুপস্থিত থাকছে, আর কোন কোন বিষয় মেনে চললে আপনি আপনার সময়গুলো আরো বেশি করে কাজে লাগাতে পারবেন। আপনার এই ছোট্ট চেষ্টাটুকু আপনার জীবনযাপন সহজ করে তুলবে।

প্রতিদিন গোছানো: চেষ্টা করুন গুছিয়ে কাজ করতে। গুছিয়ে কাজ করলে আপনার কাজের ঝামেলা কমে যাবে অনেকখানি। অফিস থেকে ফিরে সম্ভব হলে পরের দিন অফিসে যাওয়ার ফাইল, পোশাক, ব্যাগ, জুতা গুছিয়ে রাখুন। সম্ভব না হলে ছুটির দিন সারা সপ্তাহের জিনিস গুছিয়ে রাখুন। জরুরি মিটিং, পারিবারিক অনুষ্ঠান, প্রজেক্ট সাবমিট করার কথা থাকলে তা ডায়েরিতে লিখে রাখুন। আগে থেকে সব কিছু গুছিয়ে রাখলে সপ্তাহ পার করা সুবিধাই হবে আপনার জন্য।

কাজ ফেলে রাখা নয়: প্রতিদিনের কাজ প্রতিদিন শেষ করুন। এতে সপ্তাহের শেষে বাড়তি কাজ করতে হবে না, কাজের চাপও অনুভব করবেন না। সব কাজ সুন্দর ও সুষ্ঠুভাবে হয়ে যাবে, বাড়িতে আরো বেশি করে সময় কাটাতে পারবেন। বাড়িতেও কাজ ফেলে রাখবেন না।

টিম হিসেবে কাজ করুন: অফিসে টিম হিসেবে কাজ করুন। এতে মানসিক জোর পাওয়া যাবে। সমস্যায় পড়লে তখন সহকর্মীদের সহায়তাও পাওয়া যাবে। তবে মনে রাখবেন, সুবিধা দিলে তবেই কিন্তু সুবিধা পাওয়া যায়। তাই অন্যদেরও যথাসাধ্য সাহায্য করার চেষ্টা করুন।

চাপ নেবেন না: কোনো কাজের জন্যই চাপ নেবেন না। আপনার দক্ষতা ও যোগ্যতামাফিক কাজ আপনি করতে পারেন, সেই আত্মবিশ্বাস রাখুন। চাপ না থাকলে দেখবেন ঝরঝরে লাগবে। সে ক্ষেত্রে আপনার আশপাশের মানুষও আপনার সতেজতার পরশ পাবে।

অপ্রয়োজনীয় কাজ নয়: যে কাজের প্রয়োজন নেই, সেই কাজ করা বন্ধ করুন। যেমন যদি ফোন ব্যাংকিয়ে কাজ সারা যায়, তাহলে শুধু শুধু ব্যাংকে যাবেন না। যদি মনে করেন আজকে ডাস্টিং না করলেও চলবে, তাহলে ছেড়ে দিন। চেষ্টা করুন প্রতিদিনের কাজটাই গুরুত্ব দিয়ে শেষ করতে।

‘না’ বলতে শিখুন: কখনো কখনো ‘না’ বলাটা খুব জরুরি। কেউ সুযোগ নিচ্ছে মনে হলে সঙ্গে সঙ্গে ‘না’ বলুন। এতে সাময়িকভাবে তাঁর খারাপ লাগলেও তিনি বুঝতে পারবেন যে এ ধরনের অনুরোধ করা উচিত নয়। বাড়িতেও সব কাজের দায়িত্ব নিজে নিতে যাবেন না। অন্যদের আঘাত না দিয়ে আপনার জন্য বাড়তি কাজ ঝেরে ফেলুন।

সপ্তাহান্তের বিশ্রাম: সপ্তাহজুড়ে কাজ করার পর পরিবার-পরিজন নিয়ে ছুটির দিন কাটানোর বিকল্প পরিকল্পনা করুন। সব সময় ঘরে গেট টুগেদার না করে কোনো পার্কে চলে যান কিংবা বনভোজন করে ফেলুন। এই বৈচিত্র্যে সবাই খুশি হবে। আবার ঘরে বসেও অন্যান্য দিনের চেয়ে আলাদা করে একটু গল্প করুন, আলাদা করে সময় দিন স্বামী-সন্তান কিংবা মা-বাবাকে।
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url