সন্তানকে ততটুকু পকেট খরচ দিন যতটুকু দরকার


সন্তানের বাবা মা কিংবা অভিভাবক, আপনারা যদি আপনার সন্তানের উজ্জ্বল আর্থিক ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করতে চান, তাঁকে সমৃদ্ধ শিক্ষাদান এবং শ্রেণীকক্ষের পাঠদান কখনোই তাঁকে সে অবস্থানে নিয়ে যেতে পারবে না। বিশেষত তখন তো নয়ই যখন আপনি আপনার অবসরে অতিরিক্ত খরচ করে ফেলবেন এবং আপনার সন্তানকে সেটা বহন করতে হবে।

আমরা দুঃখিত আপনাকে এই পরিস্থিতির সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়ার জন্য,কিন্তু যদি আপনার সন্তান ভবিষ্যতে একজন ব্যাংক কর্মকর্তা কিংবা হিসাবরক্ষক ও হয়,যদি তাঁর যথেষ্ট পরিমানে অর্থ ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে জ্ঞান ও থাকে তবু নিজের অব্বস্থান থেকে সে পুরো বিষয়টা সামাল দিতে সক্ষম নাও হতে পারে। সেকারনে ছোট থেকেই আপনার সন্তানকে এ বিষয়ে ধারনা দেয়া উচিৎ।

এখানে কিছু উপায়ের কথা বলা হল যা আপনার বাচ্চাদের অর্থনৈতিক শিক্ষা এবং আপনার (এবং শেষ পর্যন্ত তাদের) কষ্টার্জিত নগদ সব অর্থ অপব্যয় করা থেকে বিরত রাখবে- তাঁকে ততটুকু পকেটখরচ ই দিন যতটুকু তাঁর দরকার: বেশীরভাগ মানুষ মনে করে থাকেন টাকা দিলেই সব সমস্যার সমাধান হয়।কিন্তু এই একই নিয়ম প্রযোজ্য হবে না যদি আপনি আপনার সন্তানকে নিয়ে সংরক্ষণ,বাজেট এবং বিনিয়োগ সব মিলিয়ে প্রখর হিসেবের মধ্য দিয়ে জীবন কাটাতে চান।

ধরুন, আপনি আপনার সন্তানকে প্রয়োজনের অতিরিক্ত পকেটখরচ দিচ্ছেন এবং তাঁর ছোট্ট হৃদয়ের সব ইচ্ছা খেলনা আইফোন,প্লে স্টেশন তাঁর কথা মত সব কিনে দিচ্ছেন তাহলে আপনার সন্তানের কি এটা মনে হওয়া স্বাভাবিক নয় যে সব টাকা খরচ করে জীবনের সব চাহিদা মেটানোই বেঁচে থাকার একমাত্র উদ্দেশ্য।

কিন্তু এরকম হলে এই টাকা উপার্জন করা যে কত কঠিন তা বোঝার ক্ষমতা তাঁর কখনোই হবে না। তারপর ও আপনার সন্তানের কিছু অর্থ দরকার ক্যান্টিন থেকে খাবার কেনার জন্য, একটু বড় হলে ট্রান্সপোর্ট খরচ ইত্যাদি।

তাঁকে ততটুকুই দিন যতটুকু তাঁর দরকার তাই বলে এতো সীমিত না যে তাঁকে লোকাল বাসে প্রতিদিন ঝুলে ঝুলে যেতে হয়।তাঁকে এমন পরিমাণ দিন যাতে তাঁর কিছু কিনতে হলে পকেট খরচের টাকা বাঁচিয়ে কিনতে হয়। এটা আপনার সন্তানকে শেখাবে টাকা জমানোর জন্য কতটা পরিশ্রম আর সময়ের দরকার হয়।এটা তাঁকে বার বার ভাবতে শেখাবে যে সে যেটা কিনতে চায় সেটা আসলেই তাঁর দরকার কিনা।

তাঁকে সরাসরি খেলনা কিনে দেয়ার পরিবর্তে খেলনা কেনার সময় তাঁকে সাথে নিন: আপনি হয়তো নিজেই খেলনা এনে আপনার সন্তানকে সারপ্রাইজ দিতে চান।এমনটা করা যেতে পারে তবে সবসময় নয়। বেশীরভাগ ক্ষেত্রে আপনার যেটা করা উচিৎ তা হল সন্তানকে সাথে নিয়ে খেলনা কিনতে যান এবং তাঁকে বলে দিন আপনার বাজেট ৫০০।তাঁকে নির্ধারিত বাজেটের মধ্যে পছন্দ করতে দিন।

আপনার মনে আছে,আপনি যখন ছোট ছিলেন, ৫০০ টাকার মূল্য তখন কত ছিল?হয়তো এখন অবাক হয়ে ভাবছেন কেন তখন আপনার বাবা মা আপনাকে মাত্র ৫০০ টাকা দিয়ে খেলনা কিনে দিতে পারে নি। যখন আপনার সন্তান খেলনার মূল্য সম্পর্কে ধারনা পেয়ে যাবে,সে ততই খরচ সম্পর্কে সচেতন হবে। এবং আপনি সহজেই তাঁকে বোঝাতে পারবেন এটার মূল্য বেশি বলে আপনি তাঁকে এটা কিনে দিতে পারছেন না।

আপনার বাচ্চার জন্য একটি ছোট বিনিয়োগ শুরু করুন এবং একসঙ্গে সেটি চালান: সন্তানের জন্য সব টাকা সেভিংস একাউন্টে না রেখে ছোটখাটো বিনিয়োগ শুরু করতে পারেন।আপনার সন্তানের নামেই সেটা করুন এবং তাঁকে বিনিয়োগ,অর্থ লেনদেন,দরপতন দরবৃদ্ধি ইত্যাদি সম্পর্কে ধারনা দিন।যাতে সে বুঝতে পারে,যত সময় ধরে বিনিয়োগ করা হয় অর্থ ততই বাড়তে থাকে।

বেশীরভাগ বাচ্চাদের কোন ধারনা নেই যে তাঁরা নিজেরাও তাঁদের বাবা মায়ের অর্থবৃদ্ধিতে অবদান রাখতে পারে।তাঁদের চোখ খুলে দিন।যদি আপনি আপনার বাচ্চাকে অল্প বয়সেই বিনিয়োগে মনযোগী করতে পারেন তাঁরা সময়ের সদ্ব্যবহার করতে পারবে।যেখানে বিনিয়োগে সময়ের গুরুত্বই সবচেয়ে বেশি।
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url