যোগ্যতার বাইরে পরিকল্পনা নয়!


আমি কী করব আর আমি কী করছি—এর দুটো দিক আছে। আমি কী করছি, তার আলোকে নির্ধারিত হয়ে যায়—আমি কী করব। মনে করুন, একটা পরিকল্পনা করা হলো যে—এটা করব, সেটা করব। কিন্তু কিছুই করা হচ্ছে না। সেক্ষেত্রে পরিকল্পনাগুলো সফল হয় না। এটা সবাইকে মাথায় রাখতে হবে। সবার নিজের জায়গা থেকে পরিকল্পনা থাকতে হবে, আর সেটাকে বাস্তবায়ন করতে বর্তমানকে ব্যবহার করতে হবে।

আমি বর্তমান সময়ের খুব প্রচলিত একটা ক্রাইসিসকেই উদাহরণ হিসেবে দিচ্ছি। ধরা যাক, একটা ছেলে উচ্চমাধ্যমিক পাস করেছে। সে একের পর এক ভর্তি পরীক্ষা দিচ্ছে। বাবা-মাকেও তার পরীক্ষা নিয়ে অনেক ভাবতে হচ্ছে। কিন্তু সবাই তো চান্স পায় না। তখন সেই বাবা-মাকে নিয়ে সন্তান চরম হতাশাগ্রস্থ হয়ে আমাদের এসে বলে, ‘আমি তো এখানে চান্স পেলাম না, ওখানে চান্স পেলাম না।’ তাদের মধ্যে রাজ্যের হতাশা কাজ করে। তো এরকম যদি ব্যাপারটা হয়, সেক্ষেত্রে কী করার আছে? এটা খুব বড় একটা ক্রাইসিস এই সময়ের। ভর্তিযুদ্ধে যারা চান্স পাচ্ছে, তারা তো বেঁচে গেল; আর যারা পাচ্ছে না, তাদের কী সিদ্ধান্ত হবে?

এক্ষেত্রে বলব, নিজের যোগ্যতাকে আগে থেকে বিচার করতে হবে। কারণ অনেকেই কিন্তু ভালো যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও ভালো জায়গায় চান্স পায় না। ফলে তারা বেশি হতাশায় ভোগে। তাদের কাজ হবে মনোযোগ বাড়ানোর জন্য একটু কাউন্সেলিং করা, একজন মনোরোগ বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হওয়া।

আরেকটা ব্যাপার হতে পারে, সেটা হলো—‘অপশন’ রাখা। অনেক মেয়ে আছে, যারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পায়নি বলে ইডেনে ভর্তি হয়েছে। সেক্ষেত্রে অন্তত একটা অবলম্বন তো থাকল! হতাশাটাও তাহলে কম থাকে। একই সঙ্গে তৃতীয়বারের জন্য প্রস্তুতিটাও জোরেশোরে নেওয়া যায়। আমি নতুন প্রজন্মের বন্ধুদেরকে বলব, কখনই তুলনা করা যাবে না। বন্ধুরা চান্স পেয়েছে, নিজে পাওনি—সেটার সঙ্গে যদি তুলনা করো, তাহলে তুমি আরও হতাশায় ভুগবে। তাই তাদের সাফল্যকে নিজের সাফল্য হিসেবে ভাবতে হবে। তবে তুমি যেখানেই যাবে না কেন, তোমাকে সফল হতেই হবে। সেটা ঢাকা মেডিকেল কলেজে পড়, আর নাটোরের কোনো কলেজে পড়। তোমাকে নিজের সর্বোচ্চ সাফল্যটা অর্জন করতেই হবে। তাহলেই জীবন সফল হবে।

অর্থাত্, যারা হোঁচট খেয়েছ, তাদেরকে বলব—মাথা তুলে দাঁড়াও, সামনের দিকে এগোও, তাহলেই তোমরা সফলতার আলো দেখতে পাবে এবং নিজেদের জীবনকে নতুনভাবে ফিরে পাবে।

আর পুরো তরুণ প্রজন্মকে বলব, নিজের যোগ্যতা আর অবস্থা অনুযায়ী নতুন বছরের পরিকল্পনা করো। একটা ছেলে চিন্তা করে—আমি সাংবাদিক হবো/আমি মুস্তাফিজ হবো/আমি লেখালিখি করব। সেটা যার যার চিন্তা করতেই পারে। কিন্তু মুস্তাফিজ হওয়ার যোগ্যতা আমার আছে কি না, লেখালেখি করার যোগ্যতা আমার আছে কি না—সেটা সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগেই তাকে বুঝতে হবে। নিজেকে যদি আগেই খুঁজে পেতে পার যে—আমি এই জিনিসটাতে দক্ষ, ওই জিনিসটাতে দক্ষ না; এবং এই বিবেচনা মতো যদি এগিয়ে যাও তাহলে সফল হওয়া সহজ হবে। অর্থাত্, যে কেউ যেকোনো দিকেই যেতে পারে, আমি সেটা সমর্থন করি। কিন্তু সেদিকে যাওয়ার যোগ্যতা তার আছে কি না, সেটা পরিকল্পনাকারী নিজেই একটু পরিমাপ করুক।

তার আকাঙ্ক্ষা কী, চাহিদা কী, উত্সাহ কী—এই তিনটি ব্যাপার বিবেচনা করুক। উত্সাহটা কোন বিষয়ে, চাহিদা কী—সেটা যদি আগেভাগে ধরতে পারে, তাহলে যেকোনো তরুণ নতুন বছরের জন্য যে পরিকল্পনাটা করবে, সেটা হবে যথাযথ। আমরা যদি বলে দিই—এটা করো, সেটা করো; তাহলে তা ব্যর্থ হবে। নিজেকেই সবকিছু করতে হবে। ‘ভাবিয়া করিও কাজ, করিয়া ভাবিও না’—এটা কিন্তু বিজ্ঞান। তাই এত কথা বিজ্ঞানের দিক থেকেই বলছি।

আমরা যে কাজটা করব, আমরা যে সিদ্ধান্তটা নেবো—সেটাকে আগে একটু রেকি করে নেওয়া উচিত। কাজটার ধরন কেমন, কোয়ালিটি কেমন, টাকা-পয়সা কেমন খরচ হতে পারে, সেক্ষেত্রে আমার সামর্থ্য আছে কি না—এগুলো রেকি করা দরকার। যেকোনো যুদ্ধের আগেই কিন্তু গোয়েন্দা-গুপ্তচররা রেকি করে আসে শত্রুপক্ষের এলাকা। এই রেকি নিজের জীবনেও করতে হবে, যা কিনা জীবনের সফলতা আনার ক্ষেত্রে খুবই কার্যকর।

কোনোকিছু চিন্তাভাবনা না করেই পরিকল্পনা করাকে আমি বোকামি বলব। নতুন বছরে তুমি পরিকল্পনা করো, তারপর সেটাকে রেকি করো এবং বুঝেশুনে বাস্তবায়নের পথে এগোও।
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url