ইচ্ছা থাকলে তুমিও পারবে ! সফলতা কোথায়?
আমরা সবাই স্বপ্ন দেখি জীবনে সফল হবো। কেউ হয়তো শুধু স্বপ্ন দেখি, কেউ হয়তো সফলতা কে ছোয়ার জন্য আরাম আয়েশ ত্যাগ করে রাতদিন খাটি। কিন্তু দেখা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই আমরা সফল হইনা। যখন ব্যার্থ হই তখন দেখা যায় আর পুনরায় পরিশ্রম করবার মত সময় নেই। ডুবে যেতে হয় হতাশায়। ব্যার্থতা আর হতাশা তখন আমাদের সব উদ্যম নষ্ট করে দেয়। না এখানেই সব শেষ নয়। যেখান থেকে শেষ সেখান থেকে শুরু করে দেখুন —
আমেরিকার প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিংকন (জন্ম: ১২ ফেব্রুয়ারি, ১৮০৯ – মৃত্যু: ১৫ এপ্রিল, ১৮৬৫) এর কথাই ধরি, আজকে শুধু তার দৃষ্টান্ত দেখাবো, পরবর্তীতে ব্যার্থতা থেকে সফলতা ‘র অনেক গুলো পর্ব নিয়ে আসবার ইচ্ছা থাকলো। ব্যর্থতাকে কিভাবে জয়ে পরিনত করতে হয়, নতুন করে শুরু করতে হয়, একবার হারিয়েছি বলে সব শেষ হয়ে গিয়েছে এটাই শেষ কথা নয়। একবার না পারিলে দেখো শতবার কথাটা যে সত্য সেটার সার্থকতা আপনিও প্রমান করতে পারবেন।
সফলতা অর্জনের পথে: ১. ২৩ বছর বয়সে চাকুরী হারান এবং রাজনীতিতে পরাজিত হন। ২. ২৪ বছর বয়সে ব্যবসা শুরু করতে গিয়ে ব্যবসার মূলধন হারান। ৩. ২৬ বছর বয়সে হারান প্রিয়তমা প্রেমিকা অ্যান কে। ৪. ২৭ বছর বয়সে তার নার্ভাস ব্রেকডাউন হয়। ৫. দেখতে ও সুশ্রী ছিলেননা। ৬. জন্মেছিলেন অতি দরিদ্র ঘরে। ৭. ২৯ বছর বয়সে স্পীকার পদে পরাজিত হন। ৮. ৩৪ বছর বয়সে কংগ্রেস প্রার্থী নির্বাচনে হেরে যান।
৯. ৩৯ বছর বয়সে কংগ্রেস প্রার্থী নির্বাচনে আবার পরাজিত হন। ১০. ৪০ বছর বয়সে ভূমি অফিসার পদে রিজেক্ট বা বাদ পড়েন। ১১. সিনেট নির্বাচনে হেরে যান ৪৫ বছর বয়সে। ১২. ৪৭ বছর বয়সে ভাইস প্রেসিডেন্ট পদে নির্বাচন করতে গিয়ে হেরে যান। ১৩. ৪৯ বছর বয়সে সিনেট নির্বাচনে আবারো হারেন ১৪. অবশেষে ৫২ বছর বয়সে তিনি আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন।
এই হলো আমেরিকার প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিংকনের ব্যার্থতার খোলা খাতা। আজ আমরা হলে হয়তো হাল ছেড়ে দিতাম। বলতাম এসব আমার জন্য নয়। কিন্তু না তিনি ছিলেন আব্রাহাম লিংকন, অতি দরিদ্র অবস্থা থেকেই অসম্ভব স্বপ্নকে ছুয়েছিলেন। হয়েছিলেন আমেরিকার সর্বকালের সেরা প্রেসিডেন্ট। আমেরিকার গৃহযুদ্ধ ঠেকিয়েছিলেন, সাদা কালোর বিভেদ দুর করেছিলেন, সংকটময় মুহুর্তে আবির্ভাব হয়েছিলেন আমেরিকার ত্রাতা হিসেবে।
কোয়ান্টাম মেথডের মতে পারবোনা বললেই আর পারবেননা। শুধু একবার পারবো বললেই অনেক কিছু পারবেন। পারবোনা বললে দেখবেন অনেক না পারার অজুহাত চলে আসবে। এটা সেটা বলবেন, হয়তো অজুহাত দেখাবেন, আপনি গরীব ঘরে জন্মেছেন, আপনি বস্তিতে জন্মেছেন, আপনার বাবার টাকা নেই, আপনি কালো, আপনি বেটে, আপনি পড়াশোনাই ভালোনা, আপনি নিচু জাতে জন্মেছেন। থাক আর বলবোনা।
এবার দেখুন আপনার এসব অজুহাত কিছুনা। আপনি শুধু খুজে বের করুন আপনার প্রতিভা কিসে, কোনটা করতে ভালো লাগে, আর করুন নির্দিষ্ট লক্ষ্য নিয়ে পরিশ্রম। আর সব থেকে বড় কথা আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি। আমাদের মা বাবারা ছেলেকে কি বানাবেন জিজ্ঞাসা করলে সেই মান্ধাতা আমলের উত্তর, ডাক্তার বা ইন্জিনিয়ার, বোধ হয় জগতে এ ছাড়া আর পেশা নেই। আর কোন পথ নেই। A+ না পেলে তুমি ফিনিসড এটাই শিখানো হচ্ছে। এতে না তৈরি হচ্ছে কোন সৃজনশীল সাহিত্য মনের মানুষ।
আমরা শুধু রবীন্দ্র নজরুল শরৎ বাবুর দেবদাস এসব অনুকরন করছি, এক অভিনেতা দেবদাস করেছে ০৫ বছর আগে তো আরেকজন সেই একই দেবদাস করছে ০৫ বছর পর। নতুন করে দেবদাসের মত আরেকটা রোমান্টিক উপন্যাস রচনার মত লেখক তৈরি হচ্ছেনা। বাবুরাম সাপুড়ে সেই কোনকালে রচিত, এ রকম একটা ছড়া আমরা রচনা করতে পারছিনা, পারছি ওই ছড়াটাকে রক স্টাইলে পাশ্চাত্য ঢঙে রিমিক্স করে বানাতে।
তো বলছিলাম আপনার কাজ না করার অজুহাতের কথা। বস্তিতে জন্মেছেন, আপনি অবহেলিত, সমাজের মানুষেরা আপনাকে ঘৃনা করে দুর দুর করে তাড়ায়, এ জন্য আপনি মনে করেন টোকাই হয়ে থাকতে হবে সারাজীবন ? তাহলে তাকান আর্জেন্টাইন ফুটবলার মেসির দিকে, ডাক্তার বলেছিলেন ও বামন রোগে আক্রান্ত। চারফুটের বেশি বাড়বেনা।
সব মিথ্যে, সব মিথ্যা প্রমান করে সে বার্সেলোনাতে ছোট বয়স থেকেই তার স্থান নিলো। বিশ্বখ্যাত বিশ্বসেরা ক্লাব বার্সেলোনা তার দায়িত্ব নিলো। মেসির বাবার কি ছিলো, ছিলো শুধু মেসির প্রতিভা, সব কথা মিথ্যা করে মেসি ভিনগ্রহের খেলোয়াড় হলেন, উচ্চতা ৫ ফুট ০৭ ইঞ্চি হলো বিধাতার আশির্বাদে। হয়তো পরিশ্রমী আর ভাগ্যবানের বোঝা ভগবানে বয়। আপনার জাত ছোট, তাহলে দেখুন ভারতের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী মোদির দিকে, সামান্য চা বিক্রি করা বাবার ছেলে যে নিজেও চা বিক্রি করে আজ বৃহৎ দেশ ভারতের প্রধানমন্ত্রী।
আপনি বেটে, বাংলাদেশের ক্রিকেটার মুশফিকুর রহিম বা মমিনুল কে দেখুন বা ভারতের শচীন টেন্ডুলকারকে দেখুন, বা কিংবদন্তী ফুটবল যাদুকর ম্যারাডোনা কে দেখুন। আপনি কালো, তাতে কি ওয়েস্ট ইন্ডিজের ক্রিস গেইল, শ্রীলংকান মুত্তিয়া মুরালিধরন,সর্বকালের সেরা বক্সার মোহাম্মদ আলী, ব্রাজিলের ফুটবল কিংবদন্তী পেলে এরা তো সবাই কালো। আপনার ব্যবসার টাকা নেই, আকিজ গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা মরহুম আকিজ সাহেবের শুরুর কাহিনী নেটে সার্চ দিয়ে পড়ে নিন।
পড়াশোনার কথা বলছেন, বিশ্বের এক নম্বর ধনী বিলগেটস পড়াশোনা সম্পূর্ন না করে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন মাইক্রোসফটের মত প্রতিষ্ঠান। পড়াশোনাতে ভালো না করেও তেতুলিয়ার মুস্তাফিজ বাংলাদেশের হালের বিশ্ব ক্রিকেট সেনশেসন। তবে আমি পড়াশোনা ফাঁকিবাজ দের সম্পূর্ন বিরোধী। মনে রাখবে পড়াশোনা না করলেই রবীন্দ্র নজরুল মুস্তাফিজ বা বিলগেটস হওয়া যায়না।
এটা শুধু বলেছি এ কারনে যে কোনক্রেমে তুমি জীবনযুদ্ধ না বুঝে পড়াশোনায় ফাকি দিয়েছো, রেজাল্ট খারাপ করে কোন ভালো ভবিষ্যত দেখছোনা, তো যেটা হয়নি সেটা ভেবে লাভ নেই, PAST IS PAST, এখন চেষ্টা করো অন্য কিছু করবার পৃথিবী তোমাকে যেমন হাজারটা সমস্যা দিয়েছে তেমন দিয়েছে হাজারটা সমাধান। সুশিক্ষিত জাতি গড়তে শিক্ষার বিকল্প নেই।
আরো একটা সংস্কার আমাদের সমাজে যার জন্য বেকারত্ব বেশি, আমাদের কাজকে ছোট মনে করা। ধরুন আপনার বাবা বড় কর্মকর্তা। তিনি কর্মকর্তা হয়েছেন তার নিজের মেধা ও যোগ্যতায়। কিন্তু দেখা গেলো হয়তো তার কর্মব্যাস্ততার কারনে আপনাকে তিনি ততটা গাইড করতে পারেননি। ফলে আপনি বাজে বন্ধুর কারনে বখাটে হলেন। পরীক্ষার আগে পড়াশোনা করলেন এবং কোনরকম পাশ করলেন।
ফলে আপনি না পারবেন বাবার মত যোগ্য হতে বা না পারবেন নার্সারি, মাছ চাষ, পোল্ট্রি বা ফ্রিল্যান্সিং বা আউটসোর্সিং এর মত সম্ভাবনাময় খাতের উদ্যোক্তা হতে। হয়তো আপনাকে দেখে পাছে লোকে টিপ্পনি কাটে অফিসারের ছেলে শেষে মুরগী পালবে। তখন আপনি মান রক্ষার্থে স্ট্যাটাস রক্ষার্থে অসাধু পন্থায় একটা চাকুরী যোগাড় করলেন। সাথে হয়তো দরিদ্র বলে একটা প্রতিভা যে আপনার থেকে কাজ ভালো বুঝতো তাকে বঞ্চিত করলেন। এই জাতীয় ছোট মানসিকতা থেকে না বের হতে পারলে আমাদের উন্নতি হবেনা বা বেকারত্ব থেকে মুক্ত হবেনা।
সবশেষে একটা কথা বলি তোমার যদি কিছু করবার ইচ্ছা থাকে তবে কোন কিছুই তোমাকে আটকাতে পারবেনা। তুমি পারবে, যদি তোমার ভিতর থাকে ইচ্ছার আগুন। If you have only fire.