উচ্চ শিক্ষার জন্য কেন চীনে যাবেন?


চীন পূর্ব এশিয়ার একটি রাষ্ট্র। ১৩৮ কোটি জনসংখ্যার দেশটি বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল রাষ্ট্র। চীনের শিক্ষাব্যবস্থা এখন বিদেশি শিক্ষার্থীদের কাছে জনপ্রিয়তায় শীর্ষে। চীনে প্রতিনিয়ত উচ্চ শিক্ষার পরিবেশ পরিবর্তিত এবং উন্নত থেকে উন্নততর হচ্ছে। মানসম্মত শিক্ষা, বাংলাদেশের ন্যায় একই পাঠ্যক্রমে পড়াশোনা, ইংরেজি মাধ্যমে পড়ার সুযোগ এবং সেশনজট মুক্ত শিক্ষা ব্যবস্থা ও তুলনামূলক কম খরচের জন্য অনেক শিক্ষার্থীই চীনে উচ্চশিক্ষার দিকে ঝুঁকছেন।

চীনের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ২০১৭ সালের তথ্য অনুযায়ী, চায়নাতে আন্তর্জাতিক মানের প্রায় ২৮৫০টি উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে যার মধ্যে প্রায় ২৫০০টি হচ্ছে কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়। প্রায় ৩০০টি হচ্ছে বিশেষায়িত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।

আশ্চর্যজনকভাবে, ২০১৫ সালে চায়নাতে চাকুরী প্রাপ্ত গ্র্যাজুয়েট এর সংখ্যা বিগত ৫ বছরের চেয়ে কয়েকগুণ বেড়ে গিয়ে ৭.৫ মিলিয়নে দাঁড়ায়। চীনের সরকার বিগত ১ যুগ ধরে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব প্রদান করছে উচ্চ শিক্ষার উপর। বর্তমানে চীনে প্রায় ৮০০ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিদেশী শিক্ষার্থী শিক্ষা লাভ করছে।

২০১৭ সাল পর্যন্ত চীনে মোট বিদেশী শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১৬০টি দেশ বা অঞ্চল থেকে প্রায় ৪ লক্ষাধিক। সবচেয়ে বেশি সংখ্যক স্টুডেন্ট ভর্তি হয়। এশিয়া অঞ্চল থেকে যার পরিমাণ শতকরা ৬০% আর অন্যদিকে ইউরোপ ১৮% আফ্রিকা ১১% এবং আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া, কানাডাসহ অন্যান্য উন্নত দেশসমূহ থেকে ২০%। মোট শিক্ষার্থীর প্রায় ৯০% নিজ খরচে পড়াশুনা করে আর প্রায় ১০% স্কলারশিপ শিক্ষার্থী।

চীনের প্রায় সবকটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে বিশ্বের অন্যান্য উন্নত দেশগুলোর বিভিন্ন নামি দামী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে ইন্টারন্যাশনাল এক্সচেঞ্জ প্রোগ্রাম রয়েছে। ইউনিভার্সিটি র‍্যাঙ্কিংএর জন্য নির্ভরযোগ্য ওয়েবসাইটগুলোতে ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি র‍্যাঙ্কিং অনুযায়ী, বর্তমানে টপ ১০০ এর মধ্যে চীনের ১০টি ইউনিভার্সিটি রয়েছে। বিভিন্ন বিশেষজ্ঞের মতে ২০২০ সাল নাগাদ এই সংখ্যা ২০ ছাড়িয়ে যাবে।

এছাড়াও চীনে উচ্চশিক্ষার পাশাপাশি অতিরিক্ত অর্জন হিসেবে থাকবে, চীনের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও সংস্কৃতির সাথে পরিচিত হবার সুযোগ।

চীনের সেরা কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় হল: গুয়াংডং ইউনিভার্সিটি অফ ফরেন স্টাডিজ, নানজিং নরমাল ইউনিভার্সিটি, চীনা ইউনিভার্সিটি অফ, পলিটিকাল সায়েন্স অ্যান্ড ল, সাউথেস্ট জিয়াও টং ইউনিভার্সিটি, সাউথ চীনা নরমাল ইউনিভার্সিটি, বেইজিং ফরেস্ট্রি ইউনিভার্সিটি, জিয়াংশু ইউনিভার্সিটি, শেনজেন ইউনিভার্সিটি

যেসব বিষয় পড়ানো হয়: চীনে প্রায় দুই শতাধিক বিষয়ে ব্যাচেলর, মাস্টার্স এবং ডক্টরেট প্রোগ্রামে অধ্যয়নের ব্যবস্থা রয়েছে, তার মধ্যে যে সকল বিষয়ে পড়তে মূলত বাংলাদেশী ছাত্র ছাত্রীরা চীনে যাচ্ছে সেগুলোর মধ্যে প্রধান হচ্ছে এমবিবিএস। মোট ছাত্র-ছাত্রীর শতকরা ৭০ ভাগই এ বিষয়ে পড়াশোনা করছে।

এছাড়াও আরো বিভিন্ন কোর্স রয়েছে, সেগুলো হচ্ছে, এরোনটিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং, সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং, কম্পিউটার সাইন্স ইঞ্জিনিয়ারিং, ইলেক্ট্রিক্যাল ও ইলেক্ট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং, মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং, টেলিকমিউনিকেশন, আর্কিটেকচার, সফটওয়্যার, অটোমেশন, হোটেল ম্যানেজমেন্ট, বিবিএ, এমবিএ।

এছাড়াও দেশে ও বহির্বিশ্বে ব্যাপক চাহিদার কারণে আরো কিছু কোর্স বর্তমানে বাংলাদেশী ছাত্র-ছাত্রীদের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু। যেমন: ইনফরমেশন এন্ড কমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং, কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং, এনভায়রনমেন্ট এন্ড এনার্জি ইঞ্জিনিয়ারিং, হাইড্রোলিক ইঞ্জিনিয়ারিং, ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস এন্ড ট্রেডিং।

চীনের ব্যাচেলর ডিগ্রী ৪ বছরের তবে এমবিবিএস ৫ বছরের কোর্স এবং সাথে ১ বছর ইন্টার্নশিপ, মাস্টার্স কোর্স ২-৩ বছরের আর ডক্টরাল কোর্স ৩ বছরের। অন্যদিকে নন ডিগ্রী কোর্সগুলো সাধারণত ৬ মাস থেকে ১ বৎসর পর্যন্ত মেয়াদের হয়।

১। উন্নত শিক্ষা ব্যবস্থা: চীনে অসংখ্য উন্নত ও আধুনিক এবং বিশ্বমানের বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। চীনের শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রিত হয় চীনা এডুকেশন বোর্ড দ্বারা। দুই মাধ্যমে তাদের শিক্ষা ব্যবস্থা প্রচলিত আছে। এর একটি হলো ইংরেজি মাধ্যম, অন্যটি চাইনিজ। বিদেশি ছাত্ররা তাদের পড়াশোনা ইংরেজি বা চাইনিজে করতে পারবে।

চীনের শিক্ষাব্যবস্থা এখন বিদেশি শিক্ষার্থীদের কাছে জনপ্রিয়তায় শীর্ষে। বিদেশ থেকে পাশ করা প্রফেসর, আধুনিক লাইব্রেরি ও ল্যাবরেটরি, উন্নত গবেষণার সুযোগ এবং ইংরেজি মাধ্যমে পড়তে পারা বিদেশি ছাত্রদেরকে আকর্ষণ করছে। এছাড়াও প্রায় প্রতিটি ইউনিভার্সিটিতে রয়েছে মেয়েদের জন্য আলাদা হোস্টেল সুবিধা, যেখানে ইতিমধ্যেই বহু বাংলাদেশি মেয়ে নিরাপদ পরিবেশে সাফল্যের সঙ্গে অধ্যয়ন করছে।

২। কাজের সুযোগ: আপনি যদি ইংরেজি ভাষার পাশাপাশি চীনা ভাষায় পারদর্শী হন, তাহলে ডিগ্রি পাওয়ার পর সেখানেই খুঁজে নিতে পারেন আপনার পছন্দের চাকরি। দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশটিতে বিশ্বমানের প্রতিষ্ঠানগুলো নিয়োগের ক্ষেত্রে চীনা নাগরিকদের পাশাপাশি বিদেশি শিক্ষার্থীদেরও সমমূল্যায়ন করে থাকে।

৩। বৃত্তির সুবিধা: চীনে অধ্যয়নের জন্য যে সকল স্কলারশিপসমূহ বিদেশী স্টুডেন্টরা সাধারণত পায় সেগুলো হলো: সিএসসি স্কলারশিপ বা চায়না গভর্নমেন্ট ফুল স্কলারশিপ: এ ধরনের ফুল স্কলারশিপ কভারেজ দেয়। ফুল কোর্সের টিউশন ফি, আর হাত খরচের জন্য থাকে মাসিক ভাতা। মাস্টার্স এবং ডক্টরেট পর্যায়ে এই ভাতার পরিমাণ ব্যাচেলর কোর্সের চেয়ে তুলনামূলক বেশি হয়।

প্রভিন্সিয়াল গভর্নমেন্ট স্কলারশিপ: এ ধরনের স্কলারশিপ কভারেজ দেয়, ফুল কোর্সের টিউশন ফি। র্শিয়াল স্কলারশিপ: এ ধরনের স্কলারশিপ সাধারণত ফুল কোর্সের টিউশন ফি থেকে আংশিক কভারেজ দেয়, যা প্রায় ৩০%-১০০% পর্যন্ত হতে পারে। ফার্স্ট ইয়ার স্কলারশিপ: এ ধরনের স্কলারশিপ শুধুমাত্র ১ম বৎসরের টিউশন ফি কভারেজ দেয়। চীনের ইউনিভার্সিটিগুলোতে আরো ২ ধরনের স্কলারশিপ আছে। যেমন: কনফুসিয়াস স্কলারশিপ ও ইউনিভার্সিটি স্কলারশিপ।

৪। অর্থনৈতিকভাবে উন্নত দেশ: অর্থনৈতিক দিক দিয়ে চীনের উন্নতি অভূতপূর্ব। অর্থনীতিতে চীনের অবস্থান এখন আমেরিকার পরেই। ২০৩০ সালের মধ্যে অর্থনীতির দিক থেকে আমেরিকাকে ছাড়িয়ে যাবে বলে অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন। উন্নয়ন এবং শিল্প-কারখানায় দিক থেকেও চীনের উন্নতি বিস্ময়কর।

আধুনিক এবং বিজ্ঞান ও পেশাদারী শিক্ষায় যথেষ্ট উন্নত ও পারদর্শী না হলে বিস্ময়কর এমন উন্নতি কোনোভাবেই সম্ভব হতো না। বিগত বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দা চলাকালে শক্তিশালী অর্থনীতির দেশ চীন ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ বিশ্বের অনেক দেশকে বিশাল অর্থনীতির ধস থেকে উদ্ধার করেছে।

স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক তার ২০১১ সালের এক প্রতিবেদনে মত প্রকাশ করে যে, চীন ২০২০ সালের মধ্যেই বিশ্বের সর্ববৃহৎ অর্থনীতিতে পরিণত হতে পারে। আইএমএফের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, ২০১৯ সাল নাগাদ চীনের অর্থনীতিওর আকার ২৬.৯৮ ট্রিলিয়ন ডলারে পৌঁছাবে, যা হবে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতির আকারের চেয়ে বিশ শতাংশ বেশি।

৫। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য: অসাধারণ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের দেশ চীন। চীনের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, পাহাড়, নদী, সমুদ্রসহ আধুনিক নগরায়নের জন্যই সারা বিশ্বের ভ্রমণ পিপাসুদের কাছে খুবই জনপ্রিয়। এই দেশটিতে সুন্দর স্থানের অভাব নেই। ভ্রমণকারীরা এশিয়ার বৃহত্তম দেশটিতে নির্দ্বিধায় যেতে পারেন। প্রাকৃতিক নৈসর্গের এই বেলা ভূমির অপরূপ সৌন্দর্য সকলকে বিমোহিত করবে।

চীনে ভ্রমণের কথা উঠলেই আমাদের চোখের সামনে সবার আগে ভেসে উঠে চীনের মহাপ্রাচীর (The Great Wall of China) ‘দ্যা গ্রেট ওয়াল অফ চায়না’। এটি বিশ্বের দীর্ঘতম প্রাচীর এবং চীনের প্রতীক। প্রাচীরটি চীনের পূর্ব উপকূল থেকে পশ্চিম সীমান্ত পর্যন্ত বিস্তৃত। যার দৈর্ঘ্য প্রায় ৫,০০০ কিলোমিটার। গড়ে এর উচ্চতা প্রায় ৬ থেকে ৮ মিটার এবং কিছু কিছু জায়গায় প্রায় ১৬ মিটার পর্যন্ত বিস্তৃত। এছাড়াও আরো রয়েছে লি নদী, দ্যা টেরাকোটা আর্মি, বেইজিংএর নিষিদ্ধ নগরী ইত্যাদি।
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url